এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  বামুনের মেয়ে         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 69
ঘরের অভ্যন্তর তেমনি নিস্তব্ধ, দ্বার তেমনি অবরুদ্ধ রহিল, সন্ধ্যা পিতার পিছনে পিছনে বাটীর বাহির হইয়া আসিল। কে একজন অদূরে গাছতলায় দাঁড়াইয়া ছিল, সে কাছে আসিতেই প্রিয় জ্যোৎস্নার আলোকে চিনিতে পারিয়া বলিলেন, কে অরুণ নাকি?

অরুণ কহিল, আজ্ঞে হাঁ। আজ আপনি বারোটার গাড়িতে যাবেন শুনে দেখা করতে এলাম।

প্রিয় কহিলেন, হাঁ। আর এই দেখ না মুশকিল, মেয়েটা কিছুতেই ছাড়লে না, সঙ্গ নিলে। আমি কোথায় যাই, কোথায় থাকি—দেখ দিকি এর পাগলামি!

অরুণ অবাক হইয়া কহিল, সন্ধ্যা, তুমিও যাবে?

সন্ধ্যা শুধু কেবল বলিল, হাঁ।

অরুণ একমুহূর্ত মৌন থাকিয়া একান্ত সঙ্কোচের সহিত কহিল, সেদিন রাত্রে আমি কিছুতেই মন স্থির করতে পারিনি, কিন্তু আজ নিশ্চয় করেচি, তোমার কথাতেই রাজী হব সন্ধ্যা।

প্রিয় বুঝিতে না পারিয়া শুধু চাহিয়া রহিলেন। সন্ধ্যা শান্তকণ্ঠে ধীরে ধীরে বলিল, সেদিন আমিও বড় উতলা হয়ে পড়েছিলাম অরুণদা, কিন্তু আজ আমারও মন স্থির হয়েছে। মেয়েমানুষের বিয়ে করা ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন কাজ আছে কি না, আমি সেইটে জানতেই বাবার সঙ্গে যাচ্চি। কিন্তু আর ত আমাদের সময় নেই অরুণদা—পারো ত আমাদের ক্ষমা করো। এই বলিয়া সে পিতার হাত ধরিয়া অগ্রসর হইয়া পড়িল। অরুণ সঙ্গে সঙ্গে যাইবার উদ্যোগ করিতেই সন্ধ্যা ফিরিয়া চাহিয়া কহিল, না অরুণদা, আমাদের সঙ্গে আসতে পাবে না, তুমি বাড়ি যাও।

অরুণ কহিল, সন্ধ্যা, এই দুঃখের সময় তোমার মাকে ছেড়ে চললে?

সন্ধ্যা কহিল, কি করব অরুণদা, এতদিন বাপ-মা দু’জনকেই ভোগ করবার সৌভাগ্য ছিল, কিন্তু আজ একজনকে ছাড়তেই হবে। তবু মায়ের বোধ হয় একটা উপায় আছে। কাল অনেকেই ত তামাশা দেখতে এসেছিলেন, কেউ কেউ বলছিলেন, কি নাকি একটা প্রায়শ্চিত্ত আছে। থাকে ভালই। তখন দেখবার লোকের তাঁর অভাব হবে না, কিন্তু আমি ছাড়া আমার বাবাকে সামলাবার যে আর কেউ নেই সংসারে। কিন্তু আর দাঁড়িয়ো না বাবা, চল।

এই বলিয়া তাহারা পুনশ্চ অগ্রসর হইয়া গেল। অরুণ সেইখানেই স্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল।