এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  বৈকুন্ঠের উইল         
পরিচ্ছেদ: / 13
পৃষ্ঠা: / 54
বাঁড়ুয্যেমশাই ছিলেন, কথাটা তিনিই পাড়িলেন।

দেখিতে দেখিতে গোকুলের চোখ আরক্ত হইয়া উঠিল। কহিল, ওঃ, তাই এত লোক! যান আপনারা নালিশ করুন গে, আমি এক সিকি-পয়সা ওই হতভাগা নচ্ছারকে দেব না। ও মদ খায়।

আর সকলে মৌন হইয়া রহিলেন। বাঁড়ুয্যেমশাই ভঙ্গী করিয়া হাসিয়া বলিলেন, বেশ, তাই যেন খায়, কিন্তু তুমি ওর হক্কের বিষয় আটকাবার কে? তুমি যে তোমার বাপের মরণকালে জোচ্চুরি করে উইল লিখে নাওনি তার প্রমাণ কি?

গোকুল আগুনের মত জ্বলিয়া উঠিয়া চিৎকার করিয়া কহিল, জুচ্চুরি করেছি? আমি জোচ্চোর? কোন্ শালা বলে?

গিরিশবাবু প্রাচীন লোক। তিনি মৃদুকণ্ঠে কহিলেন, গোকুলবাবু অমন উতলা হবেন না, একটু শান্ত হয়ে জবাব দিন।

বাঁড়ুয্যেমশাই পুরানো দিনের অনেক কথাই নাকি জানিতেন, তাই চোখ ঘুরাইয়া কহিলেন, তা হলে আদালতে গিয়ে তোমার মাকে সাক্ষী দিতে হবে গোকুল।

তিনি যা ভাবিয়াছিলেন, ঠিক তাই। গোকুল উন্মত্ত হইয়া উঠিল—কি, আমার মাকে দাঁড় করাবে আদালতে? সাক্ষীর কাঠগড়ায়? নি গে যা তোরা সব বিষয়-আশয়—নি গে যা—আমি চাইনে। আমি যাব না আদালতে; মাকে নিয়ে আমি কাশীবাসী হবো।

নিমাই রায়ও উপস্থিত ছিলেন, চোখ টিপিয়া বলিলেন, আহা-হা, থাক না গোকুল। কর কি, কি-সব বলচ?

গোকুল সে কথা কানেও তুলিল না। সকলের সন্মুখে ডান-পা বাড়াইয়া দিয়া বিনোদকে লক্ষ্য করিয়া তেমনি চিৎকারে কহিল, আয় হতভাগা এদিকে আয়, এই পা বাড়িয়ে দিয়েচি—ছুঁয়ে বল—তোর দাদা জোচ্চোর | সমস্ত না এই দণ্ডে তোকে ছেড়ে দিই ত আমি বৈকুন্ঠ মজুমদারের ছেলে নই।

নিমাই ভয়ে শশব্যস্ত হইয়া উঠিল, আহা-হা, কর কি বাবাজী। করুক না ওরা নালিশ—বিচারে যা হয় তাই হবে—এ-সব দিব্যি-দিলেসা কেন? চল চল, বাড়ির ভেতরে চল। বলিয়া তাহার একটা হাত ধরিয়া টানাটানি করিতে লাগিল।

কিন্তু বিনোদ মাথা তুলিয়া চাহিল না, একটা কথার জবাবও দিল না—একভাবে নীরবে বসিয়া রহিল।

গোকুল সজোরে হাত ছাড়াইয়া লইয়া কহিল, না, আমি এক-পা নড়ব না। উপর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, বাবা শুনচেন, তিনি মরবার সময় বলেছিলেন কিনা গোকুল, এই রইল তোমাদের দু'ভায়ের বিষয়। বিনোদ যখন ভাল হবে, তখন দিয়ো বাবা তার যা-কিছু পাওনা।