এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  মুসলিম সাহিত্য-সমাজ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 9
তাতে শিষ্টাচারের তাগিদে হাতের সাথে হাত মিললো, তাদের দৃষ্টি-বিনিময় হল না; একজনের অন্তর রইলো আর একজনের অন্তর থেকে শত যোজন দূরে।” এর হেতু দেখাতে গিয়ে বলেছেন, “অচেনা মুসলিম এলো বিজয়ীর বেশে, অধিকার করলো রাজার আসন। আনুগত্য, রাজসম্মান সে পায়নি এমন নয়; কিন্তু ভারতবর্ষকে স্বদেশ স্বীকার করেও দেশ-মনের মিতালি তার ভাগ্যে হয়নি, এদের অপরিচয়ের যে ব্যবধান সেটি অবাঞ্ছিত হলেও কোনদিন ঘোচেনি।” কিন্তু এই কি সমস্ত সত্য? সত্য হলে, এই অবাঞ্ছিত ব্যবধান ঘুচিয়ে মিতালি করতে ক’টা দিন লাগে? মনে হয় লীলাময় অনেক ব্যথার মধ্যে দিয়েই লিখেছেন, “যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন ও আজও তা মনে রেখেছেন, যাঁরা জলের উপর তেলের মত থাকবেন বলে স্থির করেছেন আবহমান কাল, দেশের অতীত সম্বন্ধে যাঁদের অনুসন্ধিৎসা ও বর্তমান সম্বন্ধে যাঁদের বেদনা-বোধ নেই, রাষ্ট্রের ভিতরে আর একটা রাষ্ট্র-রচনাই যাঁদের স্বপ্ন, আমরা তাঁদের কে, যে গায়ে পড়ে তাঁদের অপ্রিয় সত্য শোনাতে যাবো?”

এ কথার এ অর্থ নয় যে, ব্যবধান আমরা ভালবাসি, মিতালি চাইনে, পরস্পরের আলোচনা-সমালোচনা পরিহার করাই আমাদের বিধেয়। এ উক্তির তাৎপর্য যে কি, সমস্ত সাহিত্য-রসিক বিদগ্ধ মুসলিম সমাজকেই আমি দিতে বলি। কলহ-বিবাদ, তর্ক-বিতর্ক, বাদ-বিতণ্ডা করে নয়। কোথায় ভ্রম, কোথায় অন্যায়, কোন্‌খানে অবিচার লুকিয়ে আছে, সেই অকল্যাণকে সুস্থ সবল চিত্ত দিয়ে আবিস্কার করে দিতে বলি, এবং বলি উভয় পক্ষকেই সবিনয়ে সশ্রদ্ধায় তাকে স্বীকার করে নিতে। তখন পরস্পরের স্নেহ, প্রেম, ক্ষমা আমরা পাবোই পাবো।

ওয়াজেদ আলী সাহেব একটি চমৎকার ভরসার কথা বলেছেন, সেটি হিন্দু-মুসলমান সকলেরই মনে রাখা উচিত। বলেছেন, “মুসলিম সাহিত্য-সেবক আরবী-ফারসী শব্দ বাংলা ভাষার অঙ্গে জুড়তে চাইছেন, এতে আপত্তি-অনাপত্তি অতি তুচ্ছ কথা, কেননা শুধু কলম চালিয়ে ওটি হতে পারে না; তার জন্যে চাই প্রচুর সাহিত্যিক শক্তি, চাই সৃষ্টিশীল প্রতিভা। ও দুটি যেখানে নেই, সেখানে ভাষা ভূষণ পরতে গিয়ে অতি সহজেই সং সাজতে পারে।”

পারেই ত। কিন্তু এ জ্ঞান আছে কার? যিনি যথার্থ সাহিত্য-রসিক, তাঁর। ভাষাকে যিনি ভালবাসেন, অকপটে সাহিত্যের সেবা করেন, তাঁর। তাঁকে ত আমার ভয় নেই। আমার ভয় শুধু তাঁদের যাঁরা সাহিত্য-সেবা না করেও সাহিত্যের মুরুব্বি হয়ে বসেছেন। প্রিয় না হলেও একটা দৃষ্টান্ত দিই। ‘মহেশ’ নামে আমার লেখা একটি ছোট গল্প আছে, সেটি সাহিত্যপ্রিয় বহু লোকেরই প্রশংসা পেয়েছিল। একদিন শুনতে পেলাম গল্পটি Matric-এর পাঠ্য-পুস্তকে স্থান পেয়েছে। আবার একদিন কানে এলো সেটি নাকি স্থানভ্রষ্ট হয়েছে।