এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  আগামীকাল         
পরিচ্ছেদ: / 3
পৃষ্ঠা: / 20
বর্ণ কালোর দিকে, কিন্তু মেদ-মাংসের বাহুল্যবর্জিত দীর্ঘ-ছন্দের দেহ কর্মঠ ও কষ্টসহিষ্ণু, তা দেখামাএই বুঝা যায় এবং জন্মভূমি যে পূর্ববাঙলার কোন এক স্থলে সে পরিচয়ও ধরা পড়ে তার উচ্চারণে। মনে হয় একদিন কলেজে পড়েছিল সে নিশ্চিত, হয়ত বা কিছু কিছু পরীক্ষা পাসও করেছে, কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে বলে না, শুধু হাসে। তার ইংরাজী ও বাংলা লেখার শুদ্ধতা ও ক্ষিপ্রতা দেখে এককড়ি অবাক হয়ে যায়। সঙেঘর পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে প্যাম্‌ফ্লেট ছেপে প্রচার করার বিধি আছে। আগে রচনার ভার ছিল জলধির, এখন পড়েছে মণিমালার ’পরে। পূর্বে এই লেখাটা আদায় করতে এককড়ি গলদ্ঘর্ম হ’তো, এখন বলামাত্র লেখা আপনি আসে। জলধি সেক্রেটারি, কাটকুট না করে, কলম না চালিয়ে তার মান বাঁচে না। এককড়ি বিরক্ত হয়ে মণিমালাকে আড়ালে ডেকে বলে, ফুলের ক্ষেতে ফাল চালাবার যদি ওর শখ, কিন্তু উলুবনের ত অভাব নেই,—আমাকে বললে একটা দেখিয়ে দিতেও পারতাম,—তাতে কাজ না হোক অকাজ ঘটতো না। কিন্তু এ লেখাটা যে দশজনে পড়বে মণি, একে নাম-সই করে ছাপাতে দেবো কি করে? ওকে বলো এবার থেকে ও-ই যেন দস্তখত করে।

মণিমালা জলধির হয়ে সলজ্জে বলে, কিছু খারাপ হয়নি এককড়িদা, প্রেসে পাঠিয়ে দিন। সংশোধনগুলো আমার ভালই লেগেচে।

সেই ভাল, বলে এককড়ি ছাপাতে পাঠিয়ে দেয়। সঙেঘর বাইরের চেহারার একটা নমুনা দিলাম, ভিতরের মূর্তিটা ক্রমশঃ প্রকাশ পাবে।

জলধি হাতঘড়িটা মিলিয়ে দেখে বললে, চারটে পনেরো—ভিড় জমতে ঘণ্টা-তিনেক দেরি। সঙেঘর সেক্রেটারি আমি, সকাল সকাল আসাই আমার উচিত। খেয়েদেয়েই আসবো ভেবেছিলাম, কিন্তু ঘটে উঠলো না। পথের মধ্যে ভাবলাম সুরেন আর তারিণীকে ডেকে নিই, কিন্তু পরের কাছে আপনি পাছে মন না খোলেন সেই ভয়ে বিরত হলুম।

এককড়ি বললে, সুরেন, তারিণী পর হলো? তবে আপনার বলো কাকে?

বলি, শুধু আমার নিজেকে। ওদের সামনে মন খুললেও আমি মুখ খুলতে পারতাম না। ইতিমধ্যে গোটা-দুই অনুরোধ আছে দাদা।

কিসের অনুরোধ?

একটা এই যে সঙেঘর আপনিই দেহ, আপনিই প্রাণ। আত্মার আলোচনা করবো না, অচিন্তনীয় পদার্থ হয়ে তিনি চিন্তার অনধিগম্যই থাকুন। আমরা শুধু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তিনটে বছর ত এই দেহযন্ত্রটা টেনে টেনে বেড়ালাম, এবার অনুমতি করুন পরের হাতে ঠেলে ফেলবার আগেই এর গঙ্গাযাত্রাটা সমাধা করে যাই। দোহাই দাদা, অমত করবেন না, হুকুমটি দিন।