এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  রসচক্র         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 7
বিভূতি মনে করিল, দাদা ঠিকমত কথাটাতে কান দেন নাই, তাই আরও একটু স্পষ্ট করিয়া কহিল, আজ্ঞে হাঁ, তা ত বটেই। তাই তিনি বলেন, আপনার আবশ্যকমত টাকাটাই যদি শুধু—

শিবরতন চোখ তুলিয়া চাহিলেন; বলিলেন, আমার আবশ্যক তোমরা জানবে কি করে?

তাঁহার মুখের উপর তেমনি সহজ ও শান্ত ভাব দেখিয়া বিভূতির সাহস বাড়িল, সে প্রফুল্ল হইয়া কহিল, আজ্ঞে হাঁ, তাই তিনি বলছিলেন, আপনার চিঠিপত্রের মধ্যে তার একটুখানি আভাস থাকলেও এই বাজে-খরচটা আর হতে পারত না। শিবরতন তাঁহার হিসাবের খাতার প্রতি পুনরায় দৃষ্টি আনত করিয়া জবাব দিলেন, তাঁকে বলো, দাদা একে বাজে-খরচ বলেও মনে করেন না, চিঠিপত্রে আভাস দেওয়াও দরকার ভাবেন না। যোগীন, তামাক দিয়ে যা।

বিভূতি পাংশু-মুখে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল এবং শম্ভু দাদার আনত মুখের প্রতি কটাক্ষে চাহিয়া হাতের খবরের কাগজে মনোনিবেশ করিল।

কিছুক্ষণ পর্যন্ত কাহারো মুখেই কথা রহিল না,—একটা অবাঞ্ছিত নীরবতায় ঘর ভরিয়া রহিল। কিন্তু ইহার অর্থ বুঝিতে হইলে এই মৈত্র-বংশের ইতিবৃত্তটাকে আরও একটু পরিস্ফুট করা প্রয়োজন।

এই বিরাজপুরে ইঁহাদের সাত-আট পুরুষেরও অধিককাল বাস হইয়া গেছে, অনেক ঘর-দ্বার ভাঙ্গাগড়া হইয়াছে, অনেক ঘর-দ্বার আবশ্যকমত বাড়ানো-কমানো হইয়াছে। কিন্তু সাবেক-দিনের সেই রন্ধনশালাটি আজও তেমনি একমাত্র ও অদ্বিতীয় হইয়াই রহিয়াছে। কখনো তাহাকে বিভক্ত করা হয় নাই, কখনো তাহাতে আর একটা সংযুক্ত করিবার কল্পনা পর্যন্ত হয় নাই। এই পরিবার চিরদিন একান্নবর্তী, চিরদিনই যিনি বড়, তিনি বড় থাকিয়াই জীবনপাত করিয়া গেছেন—পরে জন্মিয়া অগ্রজের সর্বময় কর্তৃত্বকে কেহ কোনদিন প্রশ্ন করিবার অবকাশ পর্যন্ত পায় নাই।

সেই বংশের আজ যিনি বড়, সেই শিবরতন যখন ছোটভাইয়ের অত্যন্ত দুরূহ সমস্যার শুধু কেবল একটা 'প্রয়োজন নাই' বলিয়াই নিষ্পত্তি করিয়া দিলেন, তখন বড়মানুষ শ্বশুর-শাশুড়ীর নিরতিশয় ক্রুদ্ধ মুখ মনে করিয়াও বিভূতির এমন সাহস হইল না যে, এই বিতর্কের একটুকুও জের টানিয়া চলে।