যুব-সমিতির সম্মিলনে এই কথাটাই আমি সকলের চেয়ে বেশী করে বলতে চেয়েছিলাম। বলতে চেয়েছিলাম, তোমাদের পরাধীন দেশটিকে বিদেশীর শাসন থেকে মুক্তি দেবার অভিপ্রায়েই তোমাদের সঙ্ঘ গঠন। ইস্কুল-কলেজের ছাত্রদের পাঠ্যাবস্থাতেও দেশের কাজে যোগ দেবার—দেশের স্বাধীনতা-পরাধীনতার বিষয় চিন্তা করবার অধিকার আছে। এবং এই অধিকারের কথাটাও মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করবার অধিকার আছে।
বয়স কখনও দেশের ডাক থেকে কাউকে আটকে রাখতে পারে না, তোমাদের মত কিশোর-বয়স্কদেরও না।
এক্জামিনে পাস করা দরকার,—এ তার চেয়েও বড় দরকার। ছেলেবেলায় এই সত্যচিন্তা থেকে আপনাকে পৃথক করে রাখলে যে ভাঙ্গার সৃষ্টি হয়, একদিন বয়স বাড়লেও আর তা জোড়া লাগতে চায় না। এই বয়সের শেখাটাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। একেবারে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়।
নিজেও ত দেখি, ছেলেবেলায় মায়ের কোলে বসে একদিন যা শিখেছিলাম, আজ এই বৃদ্ধ বয়সেও তা তেমনি অক্ষুণ্ণ আছে। সে শিক্ষার আর ক্ষয় নাই।
তোমরা নিজের বেলাতেও ঠিক তাই মনে করো। ভেবো না যে, আজ অবহেলায় যেদিকে দৃষ্টি দিলে না, আর একদিন বড় হয়ে তোমরা ইচ্ছামতই দেখতে পাবে। হয়ত পাবে না, হয়ত সহস্র চেষ্টা সত্ত্বেও সে দুর্লভ বস্তু চিরদিনই চোখের অন্তরালে রয়ে যাবে। যে শিক্ষা পরম শ্রেয়ঃ তাকে এই কিশোর বয়সেই শিরায় রক্তের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে গ্রহণ করতে হয়, তবেই যথার্থ করে পাওয়া যায়। কালকের এই যুব-সমিতির যুবকেরা কংগ্রেসের ধরণ-ধারণ ছেলেবেলাতেই গ্রহণ করেছিল বলে সে রীতি-নীতি আর ত্যাগ করতে পারেনি। এটা ভয়ের কথা। রংপুর, ১৭ চৈত্র, (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ, বৈশাখ-৩য় বর্ষ, ১ম সংখ্যা, ‘বেনু’ মাসিকপত্রে প্রকাশিত)