এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  জাগরণ         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 64
সেদিন গাড়ির এই কাঁচভাঙ্গা লইয়া ইন্দুদের বাটীতে যে-সকল তীক্ষ্ণ ও কঠিন আলোচনা হইয়াছিল, সে-সকল আলেখ্যের মনে ছিল, তাহারই সূত্র ধরিয়া কণ্ঠস্বর তাহার উত্তপ্ত হইয়া উঠিল; কহিল, তিনি কিছুই অন্যায় করেন নি, বরঞ্চ যে-সব ভীতু লোক ভয়ে ভয়ে এই-সব স্বদেশী গুণ্ডাদের প্রশ্রয় দিয়েছিল, তারাই ঢের বেশী অন্যায় করেছিল বাবা, এ তোমাকে আমি নিশ্চয় বলছি।

সাহেবের মুখ মলিন হইল। কিন্তু আলেখ্যেরও চক্ষের পলকে মনে পড়িল, তাঁহার পিতা অসুস্থ শরীরেও সেদিন সকালে পায়ে হাঁটিয়া ডাক্তারখানায় গিয়েছিলেন এবং ডাক্তারের বারংবার আহ্বান সত্ত্বেও তেমনি হাঁটিয়াই বাটী ফিরিয়াছিলেন। পাছে তাহার তীক্ষ্ণ মন্তব্য ঘুণাগ্রেও পিতার কার্যের সমালোচনার মত শুনাইয়া থাকে, এই লজ্জায় সে একেবারে সঙ্কুচিত হইয়া উঠিল। তাহার ভগ্নস্বাস্থ্য দুর্বলচিত্ত পিতাকে সে ভাল করিয়াই জানিত। দেহের ও মনের কোনদিন কোন তেজ ছিল না বলিয়া তিনি সংসারে সকল সুবিধা পাইয়াও কখনও উন্নতি করিতে পারেন নাই। শত্রু-মিত্র অনেকের কাছে, বিশেষ করিয়া নিজের স্ত্রীর কাছে অনেকদিন অনেক কথাই এই লইয়া তাঁহাকে শুনিতে হইয়াছে, ফলোদয় কিছুই হয় নাই। এমনি ভাবেই সারা জীবন কাটিয়াছে,—কিন্তু সেই জীবনের আজ অপর প্রান্তে পৌঁছিয়া মেয়ের মুখ হইতে সেই সকল পুরানো তিরস্কারের পুনরাবৃত্তি শুনিলে দুঃখের আর বাকি কিছু থাকে না।

আলেখ্য তাড়াতাড়ি পিতার কাছে আসিয়া তাঁহার কাঁধের উপর একটা হাত রাখিয়া আদর করিয়া কহিল—কিন্তু তাই বলে তুমি যেন ভেবো না বাবা, তোমার কোন কাজকে আমি অন্যায় মনে করি।

পিতা একটু আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—আমার কোন্‌ কাজ মা? সেদিনকার নিজের কথা তাঁহার মনেও ছিল না।

মেয়ে বাপের মুখের কাছে ঝুঁকিয়া পড়িয়া বলিল—কোন কাজই নয় বাবা, কোন কাজই নয়। অন্যায় তুমি যে কিছু করতেই পারো না। তবুও তোমাকে যারা সেদিন অসুখ শরীরে ডাক্তারখানায় হেঁটে যেতে-আসতে বাধ্য করলে, বল ত বাবা, তারা কতখানি অন্যায় অত্যাচার করেছিল।

সাহেবের ঘটনাটা মনে পড়িল। তিনি সস্নেহে মেয়ের মাথার উপর ধীরে ধীরে হাত চাপড়াইতে চাপড়াইতে বলিলেন—ওঃ, তাই বুঝি তাদের ওপর তোর রাগ আলো?