এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  দিন-কয়েকের ভ্রমণ-কাহিনী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 7
সে ত আর এক-আধটা নয়, অনেক। সঙ্গে গাইড, হাতে কাগজ পেন্সিল—কোন্‌ কোন্‌ মস্‌জেদ কয়টা হিন্দু মন্দির ভাঙ্গিয়া তৈয়ার হইয়াছে, কোন্‌ ভগ্নস্তূপের কতখানি হিন্দু ও কতখানি মোসলেম, কোন্‌ বিগ্রহের কে কবে নাক এবং কান কাটিয়াছে ইত্যাদি বহু তথ্য ঘুরিয়া ঘুরিয়া সংগ্রহ করিয়া ফিরিতে লাগিলেন। অবশেষে শ্রান্তদেহে দিনের শেষে গাছতলায় বসিয়া পড়িয়া অনেকেরই দীর্ঘশ্বাসের সহিত মুখ দিয়া বাহির হইয়া আসিতে শুনিলাম—উঃ! হিন্দু-মোসলেম ইউনিটি! (‘বিজলী’, ২৫ আশ্বিন ১৩৩০)

মানুষের অত্যন্ত সাধের বস্তুই অনেক সময়ে অনাদরে পড়িয়া থাকে। কেন যে থাকে জানি না, কিন্তু নিজের জীবনে বহুবার লক্ষ্য করিয়াছি, যাহাকে সবচেয়ে বেশী দেখিতে চাই, তাহার সঙ্গেই দেখা করা ঘটিয়া উঠে না, যাহাকে সংবাদ দেওয়া সর্বাপেক্ষা প্রয়োজন, সেই-ই আমার চিঠির জবাব পায় না। শ্রীশ্রীবৃন্দাবন ধামটিও ঠিক এমনি। সুদীর্ঘ জীবনে মনে মনে ইহার দর্শনলাভ কত যে কামনা করিয়াছি তাহার অবধি নাই, অথচ আমার পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের পথের কখনো দক্ষিণে, কখনো বামে ইনিই চিরদিন রহিয়া গেছেন, দেখা আর হয় নাই। এবার ফিরিবার পথে সে ক্রটি আর কিছুতে হইতে দিব না, এই ছিল আমার পণ। দিল্লী পরিত্যাগের আয়োজন করিতেছি, শ্রীমান মন্টু অথবা দিলীপকুমার রায় ব্যস্ত-ব্যাকুলভাবে আমার বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার গলা ভাঙ্গা এবং চোখের দৃষ্টি অত্যন্ত সচেতন। বাসায় তিনি কান খাড়া করিয়াই রহিলেন। অনুমান ও কিছু কিছু জিজ্ঞাসাবাদের দ্বারা বুঝা গেল, এই কয়দিনেই দিল্লীর লোকে তাঁহাকে অত্যন্ত ভালবাসিয়াছে, তাই আত্মরক্ষার আর কোন উপায় না পাইয়া অপেক্ষাকৃত এই নির্জন স্থানে আসিয়া তিনি আশ্রয় লইয়াছেন। আমার বৃন্দাবন-যাত্রার প্রস্তাবে তিনি তৎক্ষণাৎ সঙ্গে যাইতে স্বীকার করিলেন। বৃন্দাবনের জন্য নয়, দিল্লী ছাড়িয়া হয়ত তখন ল্যাপল্যাণ্ডে যাইতেও মন্টু রাজী হইতেন। আর একজন সঙ্গী জুটিলেন শ্রীমান সুরেশ,—কাশীর ‘অলকা’ মাসিকপত্রের প্রতিষ্ঠাতা। স্থির হইল বৃন্দাবনে আমরা শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে গিয়া উঠিব, এবং সুরেশচন্দ্র একদিন পূর্বে গিয়া তথায় আমাদের বাসের বিলি-ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করিয়া রাখিবেন।

দিল্লী হইতে শ্রীবৃন্দাবন বেশি দূর নয়। শুভক্ষণ দেখিয়াই যাত্রা করিয়াছিলাম, কিন্তু পথিমধ্যে আকাশ অন্ধকার করিয়া বৃষ্টি নামিল। মথুরা স্টেশনে নামিতে জিনিসপত্র সমস্ত ভিজিয়া গেল, এবং বৃন্দাবনের ছোট গাড়িতে গিয়া যখন উঠিলাম তখন টিকিট কেনা হইল না। আধ-ঘণ্টা পরে সাধের বৃন্দাবনে নামিয়া গাড়ি পাওয়া গেল না, কুলিরা অত্যধিক দাবী করিল, টিকিট-মাস্টার জরিমানা আদায় করিলেন, একগুণ মোটঘাট ভিজিয়া