এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  মহাত্মাজী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 7
এই বিগ্রহ, এই বোঝাপড়া কবে শেষ হইবে, সে শুধু জগদীশ্বরই জানেন, কিন্তু রাজায়-প্রজায় এই সংঘর্ষ প্রজ্বলিত করিবার যিনি সর্বপ্রধান পুরোহিত, আজ যদিও তিনি অবরুদ্ধ, কিন্তু এই বিরোধের মূল তথ্যটা আবার একবার নূতন করিয়া দেখিবার সময় আসিয়াছে। সংশয় ও অবিশ্বাসই সকল সদ্ভাব, সকল বন্ধন, সকল কল্যাণ পলে পলে ক্ষয় করিয়া আসিতেছে। শাসনতন্ত্র কহিলেন, “এই”, প্রজাপুঞ্জ জবাব দিতেছে,—“না, এই নয়, তোমার মিথ্যা কথা।” রাজশক্তি কহিতেছেন, “তোমাকে এই দিব, এতদিনে দিব।” প্রজাশক্তি চোখ তুলিয়া, মাথা নাড়িয়া বলিতেছে, “তুমি আমাকে কোনদিন কিছু দিবে না,—নিছক বঞ্চনা করিতেছ।”

“কে বলিল?”

“কে বলিল! আমার সমস্ত অস্থিমজ্জা, আমার সমস্ত প্রাণশক্তি, আমার আত্মা, আমার ধর্ম, আমার মনুষ্যত্ব, আমার পেটের সমস্ত নাড়িভুঁড়িগুলা পর্যন্ত তারস্বরে চীৎকার করিয়া কেবল এই কথা ক্রমাগত বলিবার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু শোনে কে? চিরদিন তুমি শুনিবার ভান করিয়াছ, কিন্তু শোন নাই। আজও সেই পুরানো অভিনয় আর একবার নূতন করিয়া করিতেছ মাত্র। তোমাকে শুনাইবার ব্যর্থ চেষ্টায় জগতের কাছে আমার লজ্জা ও হীনতার অবধি নাই; কিন্তু আর তাহাতে প্রবৃত্তি নাই। তোমার কাছে নালিশ করিব না, শুধু আর একবার আমার বেদনার কাহিনীটা দেশের কাছে একে একে ব্যক্ত করিব।”

ভূতপূর্ব ভারত-সচিব মন্টেগু সাহেব সেবার যখন ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন, তখন এই বাঙ্গালাদেশেরই একজন বিশ্ববিখ্যাত বাঙ্গালী তাঁহাকে একখানা বড় পত্র লিখিয়াছিলেন, এবং তাহার মস্ত একটা জবাবও পাইয়াছিলেন। কিন্তু সেই আগাগোড়া ভাল ভাল ফাঁকা কথার বোঝায় ভরা চিঠিখানির ফাঁকিটুকু ছাড়া আর কিছুই আমার মনে নাই, এবং বোধ করি মনেও থাকে না। কিন্তু এ-পক্ষের মোট বক্তব্যটা আমার বেশ স্মরণ আছে। ইনি বারবার করিয়া, এবং বিশদ করিয়া ওই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের তর্কটাই চার পাতা চিঠি ভরিয়া সাহেবকে বুঝাইতে চাহিয়াছিলেন যে, বিশ্বাস না করিলে বিশ্বাস পাওয়া যায় না। যেন এতবড় নূতন তত্ত্বকথা এই ভারতভূমি ছাড়া বিদেশী সাহেবের আর কোথাও শুনিবার সম্ভাবনা ছিল না। অথচ আমার বিশ্বাস, সাহেবের বয়স অল্প হইলেও এ তত্ত্ব তিনি সেই প্রথমও শুনেন নাই এবং সেই প্রথমও জানিয়া যান নাই। কিন্তু জানা এক এবং তাহাকে মানা আর। তাই সাহেবকে কেবল এমন সকল কথা এবং ভাষা ব্যবহার করিতে হইয়াছিল, যাহা দিয়া চিঠির পাতা ভরে, কিন্তু অর্থ হয় না।