এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  সত্য ও মিথ্যা         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 6
দুই

সর্বদেশে সর্বকালে থিয়েটার জিনিসটা কেবল আনন্দ নয়, লোক-শিক্ষারও সাহায্য করে। বঙ্কিমবাবুর চন্দ্রশেখর বইখানা একসময়ে বাঙ্গালার স্টেজে প্লে হইত। লরেন্স ফস্টর বলিয়া এক ব্যক্তি ইংরাজ নীলকর অতিশয় কদাচারী বলিয়া ইহাতে লেখা আছে। কর্তাদের হঠাৎ একদিন চোখে পড়িল, ইহাতে ক্লাস হেট্‌রেড নাকি এমনি একটা ভয়ানক বস্তু আছে, যাহাতে অরাজকতা ঘটিতে পারে। অতএব অবিলম্বে বইখানা স্টেজে বন্ধ হইয়া গেল। থিয়েটারওয়ালারা দেখিলেন, ঘোর বিপদ। তাঁহারা কর্তাদের দ্বারে গিয়া ধন্না দিয়া পড়িলেন, কহিলেন—হুজুর, কি অপরাধ? কর্তারা বলিলেন, লরেন্স ফস্টর নামটা কিছুতেই চলিবে না, ওটা ইংরাজী নাম। অতএব ওটা ক্লাস হেট্‌রেড। থিয়েটারের ম্যানেজার কহিলেন, যে আজ্ঞা প্রভু! ইংরাজীনামটা বদলাইয়া এখানে একটা পর্তুগীজ নাম করিয়া দিতেছি। এই বলিয়া তিনি ডিক্রুজ, না ডিসিল্‌ভা, না কি এমনি একটা—যা মনে আসিল, অদ্ভুত শব্দ বসাইয়া দিয়া কহিলেন, এই নিন।

কর্তা দেখিয়া শুনিয়া কহিলেন, আর এই ‘জন্মভূমি’ কথাটা কাটিয়া দাও,—ওটা সিডিশন।

ম্যানেজার অবাক হইয়া বলিলেন, সে কি হুজুর, এদেশে যে জন্মিয়াছি!

কর্তা রাগিয়া বলিলেন, তুমি জন্মাইতে পার, কিন্তু আমি জন্মাই নাই। ও চলিবে না।

‘তথাস্তু’ বলিয়া ম্যানেজার শব্দটা বদলাইয়া দিয়া প্লে পাস করিয়া লইয়া ঘরে ফিরিলেন। অভিনয় শুরু হইয়া গেল। ক্লাস হেট্‌রেড হইতে আরম্ভ করিয়া মায় সিডিশন পর্যন্ত বিদেশী রাজশক্তির যত-কিছু ভয় ছিল, দূর হইল, ম্যানেজার আবার পয়সা পাইতে লাগিলেন। যাহারা পয়সা খরচ করিয়া তামাশা দেখিতে আসিল, তাহারা তামাশার অতিরিক্ত আরও যৎকিঞ্চিৎ সংগ্রহ করিয়া ঘরে ফিরিল—বাহির হইতে কোথাও কোন ত্রুটি লক্ষিত হইল না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সমস্ত বস্তুটা ছলনায় ও অসত্যের কালিতে কালো হইয়া রহিল। লরেন্স ফস্টর বলিয়া হয়ত কেহ ছিল না, ম্যানেজারের কল্পিত অদ্ভুত পর্তুগীজ নামটিও মিথ্যা। ব্যাপারটাও তুচ্ছ, কিন্তু ইহার ফল কোনমতেই তুচ্ছ নয়।