এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

প্রবন্ধ  :  স্বদেশ ও সাহিত্য         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 68
Right এবং Duty এই দুটো অনুপূরক শব্দ ত সমস্ত আইনের গোড়ার কথা। সকল দেশের সকল সামাজিক বিধানে একটা ছাড়া যে আর একটা একমুহূর্তও দাঁড়াতে পারে না, এ তো অবিসম্বাদী সত্য। কেবল আমাদের দেশেই কি এই বিশ্বনিয়মের ব্যতিক্রম ঘটবে? স্বরাজ বা স্বাধীনতা যদি আমাদের জন্মস্বত্ব হয়, ঠিক ততখানি কর্তব্যের দায় নিয়েও ত আমরা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছি। একটাকে এড়িয়ে আর একটা পাব এত বড় অন্যায়, অসঙ্গত দাবী,—এত বড় পাগলামি আর ত কিছু হতেই পারে না। ঘটনাক্রমে কেবলমাত্র ভারতবর্ষীয় হয়ে জন্মেছি বলেই ভারতের স্বাধীনতার অধিকার উচ্চকণ্ঠে দাবী করাও কোন মতেই সত্য হতে পারে না! এবং এ প্রার্থনা ইংরাজ কেন, স্বয়ং বিধাতাপুরুষও বোধ করি মঞ্জুর করতে পারেন না। এই সত্য, এই সনাতন বিধি, এই চিরনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা হৃদয় দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করার দিন আজ আমাদের এসেছে। একে ফাঁকি দিয়ে স্বাধীনতার অধিকার শুধু আমরা কেন, পৃথিবীতে কেউ কখনো পায়নি, পায় না এবং আমার বিশ্বাস, কোনদিন কখনো কেউ পেতেও পারে না। কর্তব্যহীন অধিকারও অনধিকারের সমান। কাজ করব না, মূল্য দেবো না অথচ পাবো, প্রার্থনার এই অদ্ভুত ধারাই যদি আমরা গ্রহণ করে থাকি, তা হলে নিশ্চয়ই বলছি আমি, কেবলমাত্র সমস্বরে ও প্রবলকণ্ঠে বন্দেমাতরম্‌ ও মহাত্মার জয়ধ্বনিতে গলা চিরে আমাদের রক্তই বার হবে, পরাধীনতার জগদ্দল শিলা তাতে সূচ্যগ্র ভূমিও নড়ে বসবে না।

একটুখানি অবিনয়ের অপবাদ নিয়েও বলতে হচ্ছে, বুড়ো হলেও চিরদিনের অভ্যাসে এ চোখের দৃষ্টি আমার আজও একেবারে ঝাপসা হয়ে যায়নি। যা যা দেখছি, (অন্ততঃ এই হাবড়া জেলায় যা দেখেছি) তা নিছক এই ভিক্ষার চাওয়া, দাম না দিয়ে চাওয়া, ফাঁকি দিয়ে চাওয়া। মানুষের কাজ-কর্ম, লোক-লৌকিকতা, আহার-বিহার, আমোদ-আহ্লাদ, সর্বপ্রকারের সুখ-সুবিধের কোথাও যেন কোন ত্রুটি না ঘটে, পান থেকে একবিন্দু চুন পর্যন্ত যেন না খসতে পায়,—তার পরে স্বরাজ বল, স্বাধীনতা বল, চরকা বল, খদ্দর বল, মায় ইংরাজকে ভারত সমুদ্র উত্তীর্ণ করে দিয়ে আসা পর্যন্ত বল, যা হয় তা হোক, কোন আপত্তি নেই। আপত্তি তাদের না থাকতে পারে, কিন্তু ইংরাজের আছে। শতকরা পঁচানব্বই জন লোকের এই হাস্যাস্পদ চাওয়াটাকে সে যদি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে ভারতবাসী স্বরাজ চায় না,—সে কি এত বড়ই মিথ্যা কথা বলে? যে ইংরাজ পৃথিবীব্যাপী রাজত্ব বিস্তার করেছে, দেশের জন্য প্রাণ দিতে যে এক নিমেষ দ্বিধা করে না, যে স্বাধীনতার স্বরূপ জানে, এবং পরাধীনতার লোহার শিকল মজবুত করে তৈরি করবার কৌশল যার চেয়ে বেশি কেউ জানে না,—তাকে কি কেবল ফাঁকি দিয়ে, চোখ রাঙ্গিয়ে, গলায় এবং কলমে গালিগালাজ করে, তার ত্রুটি ও বিচ্যুতির অজস্র প্রমাণ ছাপার অক্ষরে সংগ্রহ করে, তাকে লজ্জা দিয়েই এত বড় বস্তু পাওয়া যাবে? এ প্রশ্ন ত সকল তর্কের অতীত করে প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই লজ্জাকর বাক্যের সাধনায় কেবল লজ্জাই বেড়ে উঠবে, সিদ্ধিলাভ কদাচ ঘটবে না।