এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

প্রবন্ধ  :  তরুনের বিদ্রোহ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 9
কিন্তু আমি ভাবি, নানা বাগ্‌বিতণ্ডার মাঝে এ-কথা কেন না তারা স্পষ্ট করে জানায় যে পুরাতনের অভিজ্ঞতার বিরুদ্ধেই তাদের সবচেয়ে বড় লড়াই? তাদের এই বহুযত্ন-অর্জিত ঘনবিন্যস্ত অভিজ্ঞতার জ্ঞানটাকেই নিঃশেষে দগ্ধ করে দিয়ে তারা জগতকে মুক্তি দিতে চায়। কিন্তু একটা বিষয়ে তোমরা আমাকে ভুল বুঝো না। কংগ্রেস জাতীয় প্রতিষ্ঠান, বস্তুতঃ এই-ই দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান—যা বিদেশীর রাজশাসনের অবিচার ও অনাচার মুখ বুজে মেনে নেয়নি। তার দীর্ঘকালব্যাপী বাদ-প্রতিবাদ অনুযোগ-অভিযোগের সম্মিলিত কোলাহল বধির রাজকর্ণে প্রবেশ করেনি সত্য কিন্তু এ ছাড়া আর উপায় ছিল কি ? এমনিভাবে দিন চলে যাচ্ছিল, সহসা একদিন এলো মহাত্মার অদ্রোহ-অসহযোগ এবং তার টিকি বাঁধা রইলো তার খাদি-চরকার দড়িতে। স্বরাজের তারিখ ধার্য হলো ৩১শে ডিসেম্বর। এলো জেলে যাবার দিন, এলো আত্মত্যাগের বন্যা। মন্ত্র এলো বাঙ্গালার বাইরে থেকে, অথচ যত চরকা ও যত খাদি সেদিন বাঙ্গালায় তৈরী হলো, যত লোক গেল বাঙ্গালার কারাগারে, যত ছেলে দিলে জীবনের সর্বস্ব বলিদান, সমগ্র ভারতবর্ষে তার জোড়া রইল না। কেন জান? কারণ এই বাঙ্গালার ছেলে যতখানি তার দেশকে ভালবাসে, হয়ত পাঞ্জাব ছাড়া তার একাংশও ভারতের কোথাও খুঁজে মিলবে না। তাই ‘বন্দেমাতরম্‌’-মন্ত্র সৃষ্টি এই বাঙ্গালায়। এই বাঙ্গালাতে জন্ম নিয়েছিলেন পুণ্যশ্লোক স্বর্গীয় দেশবন্ধু। এদিকে ৩১শে ডিসেম্বর পার হয়ে গেল—স্বরাজ এলো না। কোথায় কোন্‌ এক অজানা পল্লী চৌরীচৌরায় হলো রক্তপাত, মহাত্মা ভয় পেয়ে দিলেন সমস্ত বন্ধ করে। দেশের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা আকাশ-কুসুমের মত একমুহূর্তে শূন্যে মিলিয়ে গেল। কিন্তু সেদিন একজন জীবিত ছিলেন, তাঁর ভয়ের সঙ্গে পরিচয় ছিল না—তিনি দেশবন্ধু। তিনি তখন জেলের মধ্যে; বাঙ্গালার বাহির-ভিতরের সকলে মিলে দিলে তাঁর সমস্ত চেষ্টা-আয়োজন নিষ্ফল করে। কে জানে, ভারতের ভাগ্য হয়ত এতদিনে আর এক পথে প্রবাহিত হতে পারতো, কিন্তু যাক সে কথা।

আবার কিছুদিন নিঃশব্দে থাকার পরে সাড়া পড়ে গেছে। সেবার ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগ, এবার হয়েছে সাইমন কমিশন। আবার সেই চরকা, সেই খাদি, সেই বয়কটের অহেতুক গর্জন, সেই তাড়ির দোকানে ধন্না দেওয়ার প্রস্তাব, সেই ৩১শে ডিসেম্বর, এবং সর্বোপরি বাঙ্গালার বাইরের নেতার দল আবারও বাঙ্গালার ঘাড়ে চেপে বসেছে। আমি জানি এবারও সেই ৩১শে ডিসেম্বর ঠিক তেমনি করে পার হয়ে যাবে। কেবল একটুখানি ক্ষীণ আশার আলো বাঙ্গালার এই যৌবনশক্তির জাগরণ। বঙ্গভঙ্গ সেটেল্‌ড্‌ ফ্যাক্ট (settled fact) একদিন আন্‌সেটেল্‌ড্‌ (unsettled) হয়েছিল—সে এই বাঙ্গালাদেশে। সেদিন বাইরে থেকে কেউ ভার বইতে আসেনি, আন্দোলন পরিচালনার পরামর্শ দিতে বাইরে থেকে কর্তা আমদানি করতে হয়নি; বাঙ্গালার সমস্ত দায়িত্ব সেদিন বাঙ্গালার নেতাদের হাতে ন্যস্ত ছিল।