এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

প্রবন্ধ  :  তরুনের বিদ্রোহ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 9
প্রথমেই একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া চাই। তরুণ-সংঘ যে রাষ্ট্রিক সংস্রবে অংশতঃ বিজড়িত, এ সত্য গোপন ক’রে লাভ নেই। এ তার কর্তব্য। অথচ এই শহরে দিন-দুই পরে বাঙ্গালা দেশের রাষ্ট্রীয় সম্মিলনের কাজ আরম্ভ হবে। সুতরাং উভয় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য যখন বহুলাংশে এক, তখন আলাদা করে তরুণ-সংঘ সম্মিলনের কি আবশ্যকতা ছিল ? কেউ কেউ বলেন আবশ্যকতা এই জন্যে যে,তরুন-সংঘের মধ্যে অনেক ছাত্র আছেন এবং ছাত্র না হয়েও এমন অনেক আছেন, যাঁরা খোলাখুলিভাবে রাষ্ট্রনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিতে পারেন না। বাধা ও নিষেধ বহুপ্রকার আছে, তাদের জন্য একটা আবরণ দরকার। কিন্তু আবরণ দিয়ে—কৌশলে ও ছলনার আশ্রয়ে, কোন দিন সত্যকার সিদ্ধিলাভ হয় না। কাজ করতেও চাই, উপরওয়ালার চোখেও ধুলো দিতে চাই—এ দুটো চাওয়া একসঙ্গে পাওয়া যায় না, অতএব যুব-সংঘকে স্পষ্ট করে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য দেশের কাছে ব্যক্ত করতে হবে। ভয় করলে চলবে না। কিন্তু তা যারা পারে না, তাদের দিয়ে এটাও হবে না,—সেটাও নিষ্ফল হবে।

কিন্তু আসলে তা নয়। এ দুটো প্রতিষ্ঠানের বাইরের চেহারায় হয়ত অনেক সাদৃশ্য আছে কিন্তু ভিতরের দিক্‌ থেকে দেখলে দেখা যাবে প্রভেদও অপরিসীম। কংগ্রেস অনেক দিনের—আমারই মত সে বৃদ্ধ; কিন্তু যুব সংঘ সেদিনের—তার শিরার রক্ত এখনও উষ্ণ, এখনও নির্মল। কংগ্রেস দেশের মাথাওয়ালা আইনজ্ঞ রাজনীতি- বিশারদগণের আশ্রয়কেন্দ্র কিন্তু যুব-সংঘ কেবলমাত্র প্রাণের ঐকান্তিক আবেগ ও আগ্রহ দিয়ে তৈরী। একটাকে চালনা করে কূটবিষয়বুদ্ধি, কিন্তু অন্যটাকে নিয়োজিত করে জীবনের স্বাভাবিক ধর্ম; তাই নানা প্ররোচনা ও উত্তেজনার পর মাদ্রাজ-কংগ্রেস যখন পাস করেছিল দেশের সর্বাঙ্গীন স্বাধীনতা, তখন সে বস্তু টেঁকলো না—একটা বৎসর গত না হতেই কলিকাতার কংগ্রেসে সে মত নাকচ হয়ে গেল। স্বাধীনতার পরিবর্তে তাঁরা ফিরে চাইলেন Diminion Status; কিন্তু দেশের তরুণদল সে নির্ধারণে কান দিল না। উভয় প্রতিষ্ঠানের এইখানেই পার্থক্য। পুরাতনের বিধি-নিষেধের বেড়াজালে প্রাণ তার হাঁপিয়ে উঠে, যুব-সমিতির জন্ম-ইতিহাসের এই হেতু। শুধুই কি কেবল ভারতবর্ষে? পৃথিবীর যে-কোন দিকে চেয়ে দেখি, সেই দিকেই যেন এর নব অভ্যুদয়ের রক্তরাগ-রেখা চোখে পড়ে। দেখা যায়, কেবল রাজনীতির ক্ষেত্রেই নয়, সমাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি সর্বপ্রকার নীতির সম্পর্কেই তরুণ-শক্তি যেন নবচেতনা লাভ করেছে। তাঁরা ছাড়া জগতের বর্তমান দুর্ভেদ্য সমস্যা যে কোন মতেই মীমাংসিত হবে না, এ সত্য তারা নিঃসংশয়ে অনুভব করেছে। এটা মস্তবড় আশার কথা। পুরাতনপন্থীরা তাদের মাঝে মাঝে তিরস্কার করে বলেন, তোমরা সেদিনের—তোমাদের কতটুকু অভিজ্ঞতা? যুব-সমিতি এ অভিযোগের উত্তর দিতে ছাড়ে না।