এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

নাটক  :  বিজয়া         
পরিচ্ছেদ: / 5
পৃষ্ঠা: / 78
বিলাস। আপনি অনেক কথাই বলছেন। সাকার-নিরাকারের তর্ক আপনার সঙ্গে করব এত অপর্যাপ্ত সময় আমাদের নেই। তা সে চুলোয় যাক। আপনার মামা একটা কেন, একশোটা পুতুল গড়িয়ে ঘরে বসে পূজো করতে পারেন তাতে কোন আপত্তি নেই, শুধু কতকগুলো ঢাক, ঢোল, কাঁসি অহোরাত্র ওঁর কানের কাছে পিটে ওঁকে অসুস্থ করে তোলাতেই আমাদের আপত্তি।

নরেন। অহোরাত্র ত বাজে না। তা সকল উৎসবেই একটু হৈচৈ গণ্ডগোল হয়। অসুবিধে কিছু না হয় হলই। আপনারা মায়ের জাত, এদের আনন্দের অত্যাচার আপনি সইবেন না ত কে সইবে?

বিলাস। আপনি ত কাজ আদায়ের ফন্দিতে মা ও ছেলের উপমা দিলেন, শুনতেও মন্দ লাগল না। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, আপনার মামার কানের কাছে মহরমের বাজনা শুরু করে দিলে, তাঁর সেটা ভাল বোধ হত কি? তা সে যাই হোক, বকাবকি করবার সময় নেই আমাদের। বাবা যে হুকুম দিয়েছেন তাই হবে।

নরেন। আপনার বাবা কে, আর তাঁর নিষেধ করবার কি অধিকার তা আমার জানা নেই। কিন্তু আপনি মহরমের যে অদ্ভুত উপমা দিলেন, কিন্তু এটা রোশনচৌকি না হয়ে কাড়া-নাকড়ার বাদ্য হলে কি করতেন শুনি, এ ত শুধু নিরীহ স্বজাতির প্রতি অত্যাচার বৈ ত নয়!

বিলাস। বাবার সম্বন্ধে তুমি সাবধান হয়ে কথা কও বলে দিচ্ছি, নইলে এখুনি অন্য উপায়ে শিখিয়ে দেব তিনি কে এবং তাঁর নিষেধ করার কি অধিকার।

নরেন। (বিলাসকে উপেক্ষা করিয়া বিজয়ার প্রতি) আমার মামা বড়লোক নন। তাঁর পূজোর আয়োজন সামান্যই। তবুও এইটেই একমাত্র আপনার দরিদ্র প্রজাদের সমস্ত বছরের আনন্দোৎসব। হয়ত আপনার কিছু অসুবিধে হবে, কিন্তু তাদের মুখ চেয়ে কি আপনি এইটুকু সহ্য করতে পারবেন না?

বিলাস। (টেবিলের উপর প্রচণ্ড মুষ্ট্যাঘাত করিয়া) না পারবেন না, একশোবার পারবেন না। কতকগুলো মূর্খ লোকের পাগলামি সহ্য করবার জন্য কেউ জমিদারি করে না। তোমার আর কিছু বলবার না থাকে তুমি যাও, মিথ্যে আমাদের সময় নষ্ট করো না।

বিজয়া। (বিলাসের প্রতি) আপনার বাবা আমাকে মেয়ের মত ভালবাসেন বলেই এঁদের পূজো নিষেধ করেছেন, কিন্তু আমি বলি হলোই বা তিন-চারদিন একটু গোলমাল।

বিলাস। ওঃ—সে অসহ্য গোলমাল। আপনি জানেন না বলেই—

বিজয়া। জানি বৈ কি। তা হোক গে গোলমাল—তিনদিন বৈ ত নয়। আর আপনি আমার অসুবিধের কথা ভাবছেন, কিন্তু কলকাতা হলে কি করতেন বলুন ত? সেখানে অষ্টপ্রহর কেউ কানের কাছে তোপ দাগতে থাকলেও ত চুপ করে সইতে হতো? (নরেনের প্রতি) আপনার মামাকে জানাবেন, তিনি প্রতি বৎসর যেমন করেন, এবারেও তেমনি করুন, আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। আপনি তবে এখন আসুন, নমস্কার।

নরেন। ধন্যবাদ—নমস্কার।

[উভয়কে নমস্কার করিয়া প্রস্থান

বিজয়া। আমাদের কথাটাই ত শেষ হতে পেলে না। তা হলে তালুকটা নেওয়াই কি আপনার বাবার মত?

বিলাস। হুঁ।

বিজয়া। কিন্তু এর মধ্যে কোনরকম গোলমাল নেই ত?

বিলাস। না।

বিজয়া। আজ কি তিনি ওবেলা এদিকে আসবেন?