এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  বছর-পঞ্চাশ পূর্বের একটা কাহিনী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 10
পথে ভয়টা যে কি তা এ অঞ্চলের সবাই জানে। ঠাকুরমা একেবারে বেঁকে দাঁড়ালেন, বললেন, না, কখনো না। যদি পালিয়ে যাস, তোর ইস্কুলের মাস্টারমশাইকে চিঠি লিখে পাঠাবো, তিনি পঞ্চাশ ঘা বেত দেবেন।

নিরুপায় হয়ে আমি তখন অন্য ফন্দি আঁটলাম। নয়ন চলে গেলে, পুকুরে নেয়ে আসি বলে তেল মেখে গামছা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নদীর ধারে ধারে বনজঙ্গল ও আম-কাঁঠাল বাগানের ভিতর দিয়ে মাইল দুই-আড়াই ছুটতে ছুটতে যেখানটায় আমাদের কাঁচা রাস্তা এসে পাকা রাস্তায় মিলেছে সেইখানটায় এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। মিনিট-দশেক পরে দেখি নয়ন আসচে। সে আমাকে দেখে প্রথমটা খুব বকলে, তারপর আমি কি করে এসেছি শুনে হেসে ফেললে। বললে, চলো ঠাকুর, যা অদৃষ্টে আছে তাই হবে। এতদূর এসে আর ত ফিরতে পারিনে।

নয়নদা সাতগাঁর একটা দোকান থেকে মুড়ি-মুড়কি-বাতাসা কিনে আমার কোঁচার খুঁটে বেঁধে দিলে, খেতে খেতে প্রায় দুপুরবেলা দু'জনে বসন্তপুরে এসে ওর পিসীর বাড়িতে পৌঁছলাম। পিসীর অবস্থা সচ্ছল। বাড়ির নীচেই কুন্তী নদী; ছোট, কিন্তু জল আছে, জোয়ার-ভাটা খেলে। স্নান করে এলাম, ওদের বড়বৌ কলাপাতায় চিঁড়ে গুড় দুধ কলা দিয়ে ফলারের যোগাড় করে দিলে। খাওয়া হলে নয়নের পিসী বললে, ছেলেমানুষ, চার-পাঁচ কোশ পথ হেঁটে এসেছে, আবার যেতে হবে। এখন শুয়ে একটু ঘুমুক তার পরে বেলা পড়লে যাবে। তার ছোট ছেলে ছিপ কেটে আনতে গেল।

নয়ন আর আমি দু'জনেই পথ হেঁটে এমনি ক্লান্ত হয়েছিলাম যে আমাদের ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন চারটে বেজে গেছে। বেলার দিকে চেয়ে নয়নদা একটু চিন্তিত হলো, কিন্তু মুখে কিছু বললে না। মিনিট-দশেকের মধ্যেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। যাবার সময় সে প্রণামী বলে পিসীকে টাকা-পাঁচটা দিতে গেল; কিন্তু তিনি নিলেন না, ফিরিয়ে দিলেন। বললেন, তোর ছেলেমেয়েদের বাতাসা কিনে দিস।

আমার কাঁধে ছিপের তাড়া, নয়নের বাঁ হাতে গরুর দড়ি, ডান হাতে চার হাত লম্বা বাঁশের লাঠি। কিন্তু গরু নিয়ে দ্রুত চলা যায় না, কোশ-দুই না যেতেই সন্ধ্যা উতরে আকাশে চাঁদ দেখা দিলে। রাস্তার দু'ধারেই বড় বড় অশ্বত্থ, বট আর পাকুড় গাছ ডালে ডালে মাথায় মাথায় ঠেকে এক হয়ে আছে। পথ অন্ধকার, শুধু কেবল পাতার ফাঁকে ফাঁকে জোছনার ম্লান আলো স্থানে স্থানে পথের উপর এসে পড়েছে। নয়ন বললে, দাদাভাই, তুমি আমার বাঁ দিকে এসে তোমার বাঁ হাতে গরুর দড়িটা ধরো, আমি থাকি তোমার ডাইনে।