এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  পরেশ         
পরিচ্ছেদ: / 7
পৃষ্ঠা: / 10
দুই

ছোটভাই হরিচরণ এতদিন বিদেশে সামান্য চাকরিই করিতেছিল, হঠাৎ লড়াইয়ের পরে কি জানি কেমন করিয়া সে বড়লোক হইয়া চাকরি ছাড়িয়া বাড়ি চলিয়া আসিল। লোককে চড়া সুদে টাকা ধার দিতে লাগিল, স্ত্রীর নামে একটা বাগান খরিদ করিয়া ফেলিল, এবং আরও দু-একটা কি-কি কাজ করিল যাহাতে তাহার টাকার গন্ধ পাঁচ-সাতখানা গ্রামের লোকের নাকে পৌঁছিতে বিলম্ব হইল না।

একদিন হরিচরণ আসিয়া সবিনয়ে কহিল, দাদা, অনেকদিন ধরেই আপনাকে একটা কথা বলব ভাবচি—

গুরুচরণ কহিল, বেশ বল।

হরিচরণ ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, আপনি একলা আর কত পারবেন, বয়সও হ’লো—

গুরুচরণ কহিল, হ’লো বৈ কি। ষাট চলচে।

হরিচরণ কহিল, তাই বলছিলাম, আমি ত এখন বাড়িতেই রইলাম, বিষয়-আশয়গুলো সব এলোমেলো হয়ে রয়েছে, একটু চিহ্নিত করে নিয়ে যদি আমিই—

গুরুচরণ ক্ষণকাল ছোটভাইয়ের মুখের প্রতি চাহিয়া থাকিয়া কহিল, বিষয়-আশয় আমাদের সামান্যই, আর তা এলোমেলো হয়েও নেই, কিন্তু তুমি কি পৃথক হবার প্রস্তাব করচ?

হরিচরণ লজ্জায় জিভ কাটিয়া কহিল, আজ্ঞে না না, যেমন আছে যেমন চলচে তেমনই সব থাকবে, শুধু যা যা আমাদের আছে একটু অমনি চিহ্ন দিয়ে নেওয়া, আর রান্না-বান্নাটাও বড় ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার—সমস্ত একই থাকবে—তবে ডালটা ভাতটা আলাদা করে নিলে, বুঝলেন না—

গুরুচরণ বলিলেন, বুঝিচি বৈ কি! বেশ, কাল থেকে তাই হবে।

হরিচরণ জিজ্ঞাসা করিল, চিহ্নটা কিভাবে দেবেন স্থির করেছেন?

গুরুচরণ কহিলেন, স্থির করার ত এতদিন আবশ্যক হয়নি, তবে আজ যদি হয়ে থাকে, আমার তিন ভাই, তিন অংশ সমান ভাগ করে নিলেই হবে।

হরিচরণ আশ্চর্য হইয়া বলিল, তিন অংশ কি-রকম? মেজবৌ বিধবা, ছেলেপুলে নেই, তাঁর আবার অংশ কি? দু’ভাগ হবে।

গুরুচরণ মাথা নাড়িয়া বলিলেন, না, তিন ভাগ হবে। মেজবৌমা আমার শ্যামাচরণের বিধবা, যতদিন বেঁচে আছেন অংশ পাবেন বৈ কি।

হরিচরণ রুষ্ট হইল, কহিল, আইনে পেতে পারে না, শুধু খেতে-পরতে পেতে পারে।

গুরুচরণ কহিলেন, সে ত পারেই, কেননা বাড়ির বৌ।

হরিচরণ কহিল, ধরুন কাল যদি বিক্রি করতে কিংবা বাঁধা দিতে চায়?

গুরুচরণ বলিলেন, আইনে যদি সে অধিকার দেয়, তিনি করবেন।