এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  আলো ও ছায়া         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 18
দুই
সুরমা। যজ্ঞদাদা, সেই গল্পটা আবার বল না!
যজ্ঞ। কোন্‌টা সুরো?
সুরমা। সেই যে আমাকে যবে বৃন্দাবনে কিনেছিলে। কত টাকায় কিনেছিলে গো?
যজ্ঞ। পঞ্চাশ টাকায়। আমার তখন আঠার বছর বয়স। বি. এ. এক্‌জামিন দিয়ে পশ্চিমে বেড়াতে যাই। মা তখন বেঁচে, তিনিও সঙ্গে ছিলেন। একদিন দুপুরবেলায় মালতী-কুঞ্জের ধারে একদল বৈষ্ণবী গান গাইতে আসে, তারই মধ্যে প্রথম তোমাকে দেখতে পাই।
যৌবনের প্রথম ধাপটিতে পা দিয়ে জগৎটাকে এমন সুশ্রী দেখতে হয় যে, শুধু নিজের দুটি চোখে সে মাধুর্য সবটুকু উপভোগ করতে পারা যায় না; সাধ হয়, মনের মতন আর দুটি চোখ এমনি করে একসাথে এমনি শোভা সম্ভোগ করতে পারে যদি তাকে বুঝিয়ে বলতে পারি—ও কি সুরমা, কাঁদচ যে?
সুরমা। না—তুমি বল।
যজ্ঞ। তুমি তখন তের বছরের নবীন বৈষ্ণবী, হাতে মন্দিরা, গান গাইছিলে।
সুরমা। যাও—আমি বুঝি গান গাইতে পারি?
যজ্ঞ। তখন ত পারতে, তার পর অনেক পরিশ্রমে তোমাকে পাই, তুমি ব্রাহ্মণের মেয়ে, বালবিধবা। মা তোমার তীর্থে এসে আর ফিরে যেতে পারেন নি—স্বর্গে গিয়েচেন। আমার মার কাছে তোমায় এনে দিই, তিনি বুকে তুলে নিলেন—তার পর মৃত্যুকালে আবার আমাকেই ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন।
সুরমা। যজ্ঞদাদা, আমার বাড়ি কোথায়?
যজ্ঞ। শুনেছি, কৃষ্ণনগরের কাছে।
সুরমা। আমার আর কেউ নেই?
যজ্ঞ। আমি আছি, তাই যে তোমার সব, সুরমা।
সুরমার চক্ষু আবার জলে ভিজিয়া আসিল, কহিল, তুমি আমাকে আবার বেচতে পার?
যজ্ঞ। না, তা পারি না। নিজেকে না বেচে ফেললে ওটি কিছুতেই হতে পারে না।
সুরমা কথা কহিল না, তেমনিভাবে সজল-নয়নে তাহার পানে চাহিয়া রহিল। বহুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে কহিল, তুমি দাদা, আমি ছোট বোন—আমাদের দু'জনার মাঝখানে একটি বৌ আন না দাদা!
যজ্ঞ। কেন বল দেখি?