একদিন কি একটা কথার পরে ছোটবৌ মুখ অন্ধকার করিয়া স্থির হইয়া বসিয়া আছে দেখিয়া ভয়ে অন্নপূর্ণার প্রাণ উড়িয়া গেল। হঠাৎ তাঁহার কি মনে হইল, ঘরের মধ্যে ছুটিয়া গিয়া তাঁহার দেড়-বছরের ঘুমন্ত ছেলে অমূল্যচরণকে টানিয়া আনিয়া বিন্দুর কোলের উপর নিক্ষেপ করিয়াই তিনি পলাইয়া গেলেন।
অমূল্য কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল।
বিন্দু প্রাণপণ-বলে নিজেকে সংবরণ করিয়া মূর্ছার কবল হইতে আত্মরক্ষা করিয়া ছেলে বুকে করিয়া ঘরে চলিয়া গেল।
অন্নপূর্ণা আড়ালে দাঁড়াইয়া তাহা দেখিলেন এবং ফিটের ব্যামোর এই অমোঘ দৈব-ঔষধ আবিষ্কার করিয়া পুলকিত হইলেন।
সংসারের সমস্ত ভার অন্নপূর্ণার মাথায় ছিল বলিয়া তিনি ছেলে মানুষ করিতে পারিতেন না। বিশেষ, সমস্তদিনের কাজকর্মের পর রাত্রে ঘুমাইতে না পাইলে তাঁহার বড় অসুখ করিত; তাই এই ভারটা ছোটবৌ লইয়াছিল।
মাসখানেক পরে একদিন সকালবেলা সে ছেলে কোলে লইয়া রান্নাঘরে ঢুকিয়া বলিল, দিদি, অমূল্যধনের দুধ কৈ?
অন্নপূর্ণা তাড়াতাড়ি হাতের কাজটা ফেলিয়া রাখিয়া ভয়ে ভয়ে বলিলেন, এক মিনিট সবুর কর বোন, এখনি জ্বাল দিয়ে দিচ্চি।
বিন্দু ঘরে ঢুকিয়াই তাহা দেখিয়া রাগিয়া গিয়াছিল, তীক্ষ্ণকন্ঠে বলিল, কালও তোমাকে বলেছি, আমার আটটার আগে দুধ চাই, তা সে ত নটা বাজে! কাজটা তোমার যদি এতই ভারী ঠেকে দিদি, পষ্ট করে বললেই ত পার, আমি অন্য উপায় দেখি। হাঁ বামুনমেয়ে, তোমারও কি একটু হুঁশ থাকতে নেই গা, বাড়িসুদ্ধ লোকের পিণ্ডি-রান্না না হয় দু'মিনিট পরে হ’ত।
বামুনঠাকরুন চুপ করিয়া রহিলেন।
অন্নপূর্ণা বলিলেন, তোর মত শুধু ছেলেকে টিপ পরানো আর কাজল দেওয়া নিয়ে থাকলে আমাদেরও হুঁশ থাকত। এক মিনিট আর দেরি সয় না, ছোটবৌ?
ছোটবৌ তাহার উত্তরে বলিল, তোমার অতি বড় দিব্যি রইল, দিদি, যদি কোনদিন আর অমূল্যের দুধে হাত দাও; আমারও দিব্যি রইল, আর কোনদিন যদি তোমাকে বলি।