এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  বিপ্রদাস         
পরিচ্ছেদ: / 26
পৃষ্ঠা: / 151
মা বলিলেন, কিন্তু এটা? আমার টাকায় আমার প্রজা ক্ষ্যাপানো?

দ্বিজদাস এতক্ষণ নিঃশব্দে ছিল, একটা কথারও জবাব দেয় নাই। এবার উত্তর দিল, কহিল, কালকের সভা-সমিতির জন্যে তোমাদের এস্টেটের একটা পয়সাও আমি অপব্যয় করিনি।

মা ঘরে ঢুকিয়া পর্যন্ত একবারও পিছনে তাকান নাই, এখনও চাহিলেন না। বিপ্রদাসকেই প্রশ্ন করিলেন, তা হলে হতভাগাকে জিজ্ঞেস কর ত টাকা পেলে কোথায়? রোজগার করচে?

ঠিক এমনি সময়ে পর্দার বাহিরে টুংটাং করিয়া একটুখানি চুড়ির শব্দ হইল। বিপ্রদাস কান পাতিয়া শুনিয়া বলিল, ঐ ত তার জবাব মা! তোমার নিজের ঘরের বৌ যদি টাকা যোগায়, কে আটকাবে বল দিকি?

মায়ের মনে পড়িল। কহিলেন, ও তাই বটে! সতীর কাজ এই! বড়মানুষের মেয়ে বাপের জমিদারি থেকে বছরে যে ছ’ হাজার টাকা পায়, সে আমার খেয়াল ছিল না। তিনিই গুণধর দেওরকে টাকা যোগাচ্চেন! একটুখানি স্থির থাকিয়া কহিলেন, তোর সম্বন্ধ করতে বেয়াইমশাই নিজে যখন এলেন তখনি কর্তাকে আমি বলেছিলুম, রায়বাড়ির মেয়ে ঘরে এনে কাজ নেই। ওদের বংশেরই ত অনাথ রায় বিলেত গিয়ে মেম বিয়ে করেছিল। ওরা পারে না কি? ওদের অসাধ্য সংসারে কি আছে?

বিপ্রদাস তেমনি হাসিমুখে চুপ করিয়া রহিল। সে জানিত সতীর অদৃষ্টে এ খোঁটা আর যাবার নয়। তাহার বাপের বাড়ির সম্পর্কে কে এক অনাথ রায় বাঙালী-মেম বিবাহ করিয়াছিল, এ কথা মা আর ভুলিতে পারিলেন না।

সকলেই চুপ করিয়া আছে দেখিয়া তিনি পুনশ্চ বলিলেন, আচ্ছা থাক। বাবা কৈলাসনাথ এবার টেনেছেন, তাঁকে দর্শন করে ফিরে আসি, তার পরে এর বিহিত করব। এই বলিয়া তিনি ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন।

বিপ্রদাস কহিলেন, কি রে দ্বিজু, মাকে নিয়ে পারবি যেতে? উনি ঝোঁক যখন ধরেছেন তখন থামানো যাবে বলে ভরসা হয় না।

দ্বিজদাস তৎক্ষণাৎ অস্বীকার করিয়া কহিল, আপনি তো জানেন, ঠাকুর-দেবতায় আমার বিশ্বাস নেই। তা ছাড়া আমার সঙ্গে উনি বৈকুণ্ঠে যেতেও নারাজ, এ ত তাঁর নিজের মুখ থেকেই শুনলেন।

বিপ্রদাস বিরক্ত হইয়া কহিলেন, হাঁ রে পণ্ডিত, শুনলাম। তুই যেতে পারবি কি না তাই বল।

আমার এখন মরবার ফুরসুত নেই। এই বলিয়া দ্বিজদাস অন্য প্রশ্নের পূর্বেই ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল।

বিপ্রদাস নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, তাই বটে। এমনি দেশের কাজ যে মাকেও মানা চলে না।

এইখানে মায়ের একটুখানি পরিচয় দেওয়া আবশ্যক। বিপ্রদাসের ইনি বিমাতা। তাঁহার জননীর মৃত্যুর বৎসর-কাল পরেই যজ্ঞেশ্বর দয়াময়ীকে বিবাহ করিয়া গৃহে আনিয়াছিলেন এবং সেইদিন হইতে ইঁহার হাতেই সে মানুষ। ইনি যে জননী নহেন এ সংবাদ বিপ্রদাস যথেষ্ট বয়স না হওয়া পর্যন্ত জানিতেও পারে নাই।