এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  নব-বিধান         
পরিচ্ছেদ: / 17
পৃষ্ঠা: / 47
শৈলেশ আসলে লোক মন্দ ছিল না, কিন্তু সে অত্যন্ত দুর্বল-প্রকৃতির মানুষ। তাই সত্যকার লজ্জার চেয়ে চক্ষুলজ্জাই তাহার প্রবল ছিল। বিদ্যাভিমানের সঙ্গে আর একটা বড় অভিমান তাহার এই ছিল যে, সে জ্ঞানতঃ কাহারও প্রতি লেশমাত্র অন্যায় বা অবিচার করিতে পারে না। বন্ধুরাও মুখে না বলিলেও মনে মনে যে তাহাকে এই ব্যাপারে অত্যন্ত অপরাধী করিয়া রাখিবে, ইহা বুঝিতে বাকী ছিল না—এই অখ্যাতি সহ্য করা তাহার পক্ষে অসম্ভব।

সারারাত্রি চিন্তা করিয়া ভোর নাগাদ তাহার মাথায় সহসা অত্যন্ত সহজ বুদ্ধির উদয় হইল। তাহাকে আনিতে পাঠাইলে ত সকল সমস্যার সমাধান হয়। প্রথমতঃ সে আসিবে না। যদি বা আসে ম্লেচ্ছর সংসার হইতে সে দু’দিনেই আপনি পলাইবে। তখন কেহই আর তাহাকে দোষ দিতে পারিবে না। এই দু-পাঁচ দিন সোমেনকে তাহার পিসির বাড়িতে পাঠাইয়া দিয়া নিজে অন্যত্র কোথাও গা-ঢাকা দিয়া থাকিলেই হইল। এত সোজা কথা কেন যে তাহার এতক্ষণ মনে হয় নাই, ইহা ভাবিয়া সে আশ্চর্য হইয়া গেল। এই ত ঠিক!

কলেজ হইতে সে সাতদিনের ছুটি লইল। এলাহাবাদে একজন বাল্যবন্ধু ছিলেন, নিজের যাওয়ার কথা তাঁহাকে তার করিয়া দিল এবং বিভাকে চিঠি লিখিয়া দিল যে, সে নন্দীপুর হইতে ঊষাকে আনিতে পাঠাইতেছে, যদি আসে ত সে যেন আসিয়া সোমেনকে শ্যামবাজারে লইয়া যায়। এলাহাবাদ হইতে ফিরিতে তাহার দিন সাতেক বিলম্ব হইবে।

শৈলেশের এক অনুগত মামাত ভাই ছিল, সে মেসে থাকিয়া সদাগরী অফিসে চাকরি করিত। তাহাকে ডাকিয়া আনিয়া বলিল, ভূতো, তোকে কাল একবার নন্দীপুরে গিয়ে তোর বৌদিকে আনতে হবে।

ভূতনাথ বিস্মিত হইয়া কহিল, বৌদিটা আবার কে?

তুই ত বরযাত্রী গিয়েছিলি, তোর মনে নেই? উমেশ ভট্‌চায্যির বাড়ি?

মনে খুব আছে, কিন্তু কেউ কারুকে চিনিনে, তিনি আসবেন কেন আমার সঙ্গে?

শৈলেশ কহিল, না আসে নেই—নেই। তোর কি? সঙ্গে বেহারা আর ঝি যাবে। আসবে না বললেই ফিরে আসবি।

ভূতো আশ্চর্য হইয়া কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, আচ্ছা যাব। কিন্তু মারধোর না করে।

শৈলেশ তাহার হাতে খরচপত্র এবং একটা চাবি দিয়া কহিল, আজ রাত্রের ট্রেনে এলাহাবাদে যাচ্ছি। সাত দিন পরে ফিরব। যদি আসে এই চাবিটা দিয়ে ওই আলমারিটা দেখিয়ে দিবি। সংসার খরচের টাকা রইল। পুরো একমাস চলা চাই।

ভূতনাথ রাজী হইয়া কহিল, আচ্ছা। কিন্তু হঠাৎ তোমার এ খেয়াল হল কেন মেজদা? খাল খুঁড়ে কুমীর আনচ না ত?

শৈলেশ চিন্তিতমুখে খানিকক্ষণ নিঃশব্দে থাকিয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, আসবে না নিশ্চয়। কিন্তু লোকতঃ ধর্মতঃ একটা কিছু করা চাই ত! শ্যামবাজারে একটা খবর দিস। সোমেনকে যেন নিয়ে যায়।

রাত্রের পাঞ্জাব মেলে শৈলেশ্বর এলাহাবাদ চলিয়া গেল।