এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  বামুনের মেয়ে         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 69
কিন্তু পরক্ষণেই কণ্ঠস্বর অনির্বচনীয় কৌশলে উচ্চ সপ্তক হইতে একেবারে খাদের নিখাদে নামাইয়া লইয়া জগদ্ধাত্রীকে সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন, মা, ভাল কথাই বলেছিলুম। মঙ্গলবারের বারবেলায় মেয়েটা ছাগলদড়ি ডিঙিয়ে ফেললে, তাই বললুম, আহা, কে এমন করে পথের ওপর ছাগল বাঁধলে গা? তাই না শুনতে পেয়ে দুলি-ছুড়ীটা ছুটে এসে বাছার মুখের ওপর আঁচল ঘুরিয়ে মারলে! বলে ঠাকুরমশায়ের জায়গায় ছাগল বেঁধেচি, তুমি বলবার কে? তাই মা, তোমার মেয়েকে ডেকে শুধু এই কথাটি বলেচি, দিদি, এই যে অবেলায় মেয়েটার নাইতে হবে, বারবেলায় ছাগলদড়ি ডিঙিয়ে ফেললে—তা তোমার বাবা যদি এদের দুলেপাড়া থেকে তুলে এনে বসিয়েই থাকে ত দিদি, ছাগল-টাগলগুলো একটু দেখেশুনে বাঁধতে বলে দিস্‌—ছোটজেতের আচার-বিচারের জ্ঞানগম্যি ত নেই—চাটুয্যেদাদা, বুড়োমানুষ, এই পথেই ত আসা-যাওয়া করে—মাড়ামাড়ি করে আবার রেগে-টেগে উঠবে—মা, এই। এতেই তোমার মেয়ে আমায় মারতে যা বাকী রেখেচে। বলে, যা যা, তোর চাটুয্যেদাদাকে ডেকে আন্‌ গে! তার মত বড়লোক আমি ঢের দেখেচি! তার বাপের জায়গায় যখন হাড়ী-দুলে প্রজা বসাব, তখন যেন সে শাসন করতে আসে। আচ্ছা, তুমিই বল দিকি মা, এইগুলো কি মেয়ের কথা?

জগদ্ধাত্রী অগ্নিমূর্তি হইয়া কহিলেন, বলেছিস্‌ এইসব?

সন্ধ্যা এতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাক-বিস্ময়ে রাসমণির মুখের প্রতি চাহিয়া ছিল, মায়ের কণ্ঠস্বরে চকিত হইয়া ঘাড় ফিরাইয়া শুধু বলিল, না।

বলিস্‌ নি, তবে কি মাসী মিছে কথা কইচে?

বল্‌ মা, তাই একবার তোর মেয়েকে বল্‌।

সন্ধ্যা মুহূর্তকাল মৌন থাকিয়া মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিল, জানিনে মা, কার কথা মিছে। কিন্তু তোমার আপনার মেয়ের চেয়ে এই পাতানো-মাসীকেই যদি বেশী চিনে থাকো ত না হয় তাই।

এই বলিয়া দ্বিতীয় প্রশ্নের পূর্বেই খোলা দ্বার দিয়া দ্রুতপদে ভিতরে চলিয়া গেল। উভয়েই বিস্ফারিত-নেত্রে সেইদিকে চাহিয়া রহিলেন, এবং অবসর বুঝিয়া দুলে-মেয়েটাও তাহার ছাগলছানা বুকে করিয়া নিঃশব্দে সরিয়া পড়িল।

রাসমণি বলিলেন, দেখলি ত জগো, তোর মেয়ের তেজ! শুনলি ত কথা! বলে, পাতানো মাসী! কুলীনের ঘরের মেয়ে, তাই। নইলে, বিয়ে হলে এ-বয়সে যে পাঁচ-ছ' ছেলের মা হতে পারতো। পাতানো মাসী,—শুনলি ত!

জগদ্ধাত্রী চুপ করিয়া রহিলেন, এবং রাসমণি নিজেও একটু স্থির থাকিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিলেন, হাঁ জগো, শুনলুম নাকি অমর্ত চক্কোত্তির ছেলেটাকে তোরা আজও বাড়িতে ঢুকতে দিস্‌? বলি, কথাটা কি সত্যি?