এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  চন্দ্রনাথ         
পরিচ্ছেদ: / 20
পৃষ্ঠা: / 57
এক বৎসর চন্দ্রনাথ নানা স্থানে একা ভ্রমণ করিয়া বেড়াইল। তাহার পর গয়ায় আসিয়া স্বর্গীয় পিতৃদেবের সাংবাৎসরিক পিণ্ডদান করিল, কিন্তু তাহার বাটী ফিরিয়া যাইবার ইচ্ছা হইল না—মনে করিল, কিছুদিন কাশীতে অতিবাহিত করিয়া যাহা হয় করিবে। কাশীতে মুখোপাধ্যায় বংশের পাণ্ডা হরিদয়াল ঘোষাল। চন্দ্রনাথ একদিন দ্বিপ্রহরে একটি ক্যাম্বিসের ব্যাগ হাতে লইয়া তাঁহার বাটীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। কাশী চন্দ্রনাথের অপরিচিত নহে, ইতিপূর্বে কয়েকবার সে পিতার সহিত এখানে আসিয়াছিল। হরিদয়ালও তাহাকে বিলক্ষণ চিনিতেন। অকস্মাৎ তাহার এরূপ আগমনে তিনি কিছু বিস্মিত হইলেন। উপরের একটা ঘর চন্দ্রনাথের জন্য নির্দিষ্ট হইল, এবং ইহাও স্থির হইল যে, চন্দ্রনাথের যতদিন ইচ্ছা তিনি এইখানে থাকিবেন।

এ কক্ষের একটা জানালা দিয়া ভিতরের রন্ধনশালার কিয়দংশ দেখা যাইত। চন্দ্রনাথ আগ্রহের সহিত অনেক সময় এইদিকে চাহিয়া থাকিত। রন্ধন-সামগ্রীর উপরেই যে আগ্রহ তাহা নহে, তবে রন্ধনকারিণীকে দেখিতে বড় ভাল লাগিত।

বিধবা সুন্দরী। কিন্তু মুখখানি যেন দুঃখের আগুনে দগ্ধ হইয়া গেছে! যৌবন আছে কি গিয়াছে, সেও যেন আর চোখে পড়িতে চাহে না। তিনি আপন মনে আপনার কাজ করিয়া যান, নিকটে কেবল একটি দশমবর্ষীয়া বালিকা রন্ধনের যোগাড় করিয়া দিতে থাকে। চন্দ্রনাথ অতৃপ্তনয়নে তাহাই দেখে।

কিছুদিন তিনি চন্দ্রনাথের সম্মুখে বাহির হইলেন না। আহার্য সামগ্রী ধরিয়া দিয়া সরিয়া যাইতেন। কিন্তু ক্রমশঃ বাহির হইতে লাগিলেন। একে ত চন্দ্রনাথ বয়সে ছোট, তাহাতে এক স্থানে অধিক দিন ধরিয়া থাকিলে একটা আত্মীয়-ভাব আসিয়া পড়ে। তখন তিনি চন্দ্রনাথকে খাওয়াইতে বসিতেন—জননীর মত কাছে বসিয়া যত্নপূর্বক আহার করাইতেন।

আপনার জননীর কথা চন্দ্রনাথের স্মরণ হয় না—চিরদিন মাতৃহীন চন্দ্রনাথ পিতার নিকট লালিত-পালিত হইয়াছিল। পিতা সে স্থান কতক পূর্ণ রাখিয়াছিলেন সত্য, কিন্তু এরূপ কোমল স্নেহ তথায় ছিল না।

পিতার মৃত্যুতে চন্দ্রনাথের বুকের যে অংশটা খালি পড়িয়াছিল, শুধু তাহাই পূর্ণ হইয়া আসিতে লাগিল তাহা নহে, অভিনব মাতৃস্নেহ-রসে তাহাকে অভিভূত করিয়া ফেলিতে লাগিল।

একদিন চন্দ্রনাথ হরিদয়ালকে জিজ্ঞাসা করিল, আপনার নিজের বলিতে কেহ ত নাই বলিয়াই জানি, কিন্তু ইনি কে?

হরিদয়াল কহিলেন, ইনি বামুন-ঠাকরুন!

কোন আত্মীয়?

না।

তবে এদের কোথায় পেলেন?

হরিদয়াল কহিলেন, সে অনেক কথা। তবে সংক্ষেপে বলতে হলে, ইনি প্রায় তিন বৎসর হ'ল স্বামী এবং ওই মেয়েটিকে নিয়ে তীর্থ করতে আসেন। কাশীতে স্বামীর মৃত্যু হয়। দেশেও এমন কোন আত্মীয় নেই যে ফিরে যান। তার পর ত দেখছ।

আপনি পেলেন কিরুপে?

মণিকর্ণিকার ঘাটের কাছে মেয়েটি ভিক্ষে করছিল।

চন্দ্রনাথ একটু চিন্তা করিয়া কহিল, কোথায় বাড়ি জানেন কি?

ঠিক জানি না। নবদ্বীপের নিকট কোন একটা গ্রামে।