এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  দু'টি আবেদন         
পরিচ্ছেদ: / 2
পৃষ্ঠা: / 3
কোম্পানীটি এবং কোম্পানীর ক্রিয়াকলাপ ঘাটালের স্থানীয় ব্যাপার হইলেও, সমস্যাটি স্থানীয় নহে, সর্বজনীন। দেশী কোম্পানী বনাম বিদেশী কোম্পানী ইহাই হইল আসল সমস্যা। একটি দেশী বাঙ্গালী কোম্পানীকে বাঁচাইয়া তুলিয়া লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত করা বাঙ্গালীর শুধুই কর্তব্য নয়, গৌরবের বিষয়। আশা করি, এই স্বাদেশিকতার ক্ষেত্র হইতে সমস্যাটিকে দেখিয়া দেশের শিক্ষিত জনসাধারণ ও ধনিগণ এই কোম্পানীকে স্বেচ্ছায় ও সানন্দে সাহায্যদানে অগ্রসর হইবেন। শুধু সাহায্য ভিক্ষা দিয়া নয়,—ব্যবসায়ে অংশীদার হইয়া যে সাহায্য দেওয়া যায় তাহাই আমরা চাই। অথচ, এ কথা প্রকাশ করা প্রয়োজন যে, এই অসম প্রতিযোগিতায় হয়ত অনেকদিন পর্যন্তই দেশী স্টীমার কোম্পানী লাভবান হইতে সমর্থ হইবে না। তথাপি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, একটি বড় স্টীমার ক্রয় করিতে পারিলেই এই দেশী 'ঘাটাল কোম্পানী' অচিরভবিষ্যতে প্রতিযোগিতামুক্ত হইয়া একটি লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হইতে পারিবে।

এই কোম্পানীর ডিরেক্টরগণ আমার সবিশেষ পরিচিত। তাঁহাদের সহিত ভালরূপ মিশিয়া দেখিয়াছি যে, তাঁহারা প্রত্যেকেই এই কোম্পানীর কাজকে জাতীয় কাজ মনে করিয়া একান্ত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সহিত বিনা-পারিশ্রমিকে ইহার কর্ম পরিচালনা করিতেছেন। এরূপ অবস্থায়, প্রতিযোগিতা প্রতিরোধ করিবার মত সাহায্য ও সুবিধা পাইবামাত্রই এই দেশী কোম্পানী সুদৃঢ় ভিত্তির উপর নিঃসংশয়ে প্রতিষ্ঠিত হইবে।

সর্বাপেক্ষা আশা ও আনন্দের কথা এই যে, ইহার ম্যানেজার শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র ভট্টাচার্য শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতী গ্রাজুয়েট নন—কলকব্জা সম্বন্ধে তাঁহার হাতেকলমে শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতাও প্রচুর পরিমাণে আছে। তিনি নিজ হাতে স্টীমার চালানো শিক্ষা করিয়া পোর্ট আফিসে সারেঙের পরীক্ষায় পাশ করিয়াছেন এবং গত পাঁচ বৎসর ধরিয়া স্টীমারের যাবতীয় কলকব্জা কোনো ডকে না দিয়াও গবর্নমেণ্ট সারভেয়ারের অনুমোদনে নিজেই মেরামত করিয়া চালাইতেছেন। কলকবজা-ঘটিত ব্যক্তিগত জ্ঞানের অভাবে বহু স্থানে এইরূপ কোম্পানীর যে ক্ষতি হয়, বর্তমান ক্ষেত্রে তাহার আশঙ্কা নাই। প্রয়োজনীয় মূলধন পাইলে এরূপ সুদক্ষ ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে এই কোম্পানীর ক্রমোন্নতি অবশ্যম্ভাবী। আশা করি, দেশের কল্যাণকামী জনগণের নিকট আমার এই আবেদন ব্যর্থ হইবে না।—(বঙ্গবাণী, ২৩ শে মার্চ ১৯৩১)