এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

নাটক  :  বিজয়া         
পরিচ্ছেদ: / 5
পৃষ্ঠা: / 78
দয়াল। হিন্দুবিবাহ কি বিবাহ নয় মা? কিন্তু সাম্প্রদায়িক মতবাদ মানুষকে এমনি বোকা করে আনে যে, কাল সমস্ত বিকেলটা ভেবে ভেবেও এই তুচ্ছ কথাটার কূল-কিনারা খুঁজে পাইনি। কিন্তু নলিনী আমাকে একটি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিলে। বললে, তাঁর বাবা তাঁকে যাঁর হাতে দিয়ে গেছেন তোমরা তাঁর হাতেই তাঁকে দাও। নইলে ছল করে যদি অপাত্রে দান করো, তোমাদের অধর্মের সীমা থাকবে না। আর মনের মিলনই ত সত্যিকার বিবাহ, নইলে বিয়ের মন্ত্র বাংলা হবে কি সংস্কৃত হবে, ভটচায্যিমশাই পড়াবেন কি আচার্য্যমশাই পড়াবেন তাতে কি আসে-যায় মা? এত বড় জটিল সমস্যাটা যেন একেবারে জল হয়ে গেল বিজয়া, মনে মনে বললুম, ভগবান! তোমার ত কিছু অগোচর নেই, এদের বিবাহ আমি যেকোন মতেই দিই না তোমার কাছে অপরাধী হব না আমি নিশ্চয় জানি।

জনৈক ভদ্রলোক। নিশ্চয় নিশ্চয়। অতি সত্য কথা।

[ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া]

দয়াল। তুমি জানো না মা, নরেন তোমাকে কত ভালবাসে। তবু সে এমন ছেলে যে তোমার মাথায় অসত্যের বোঝা তুলে দিয়ে তোমাকেও গ্রহণ করতে রাজী হতো না। একবার আগাগোড়া তার কাজগুলো মনে করে দেখ দিকি বিজয়া।

[বিজয়া নিঃশব্দে নতমুখে স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া রহিল।
নলিনী ছুটিয়া আসিয়া তাহার হাত ধরিল]

নলিনী। বাঃ আমি এতক্ষণ খবর পাইনি! কাজের ভিড়ে কিছু জানতেই পারিনি। ওপরে চল ভাই, তোমাকে সাজাবার ভার পড়েছে আজ আমার ওপর। চল শিগগির।

[এই বলিয়া সে বিজয়াকে টানিয়া লইয়া ভিতরে চলিয়া গেল। সঙ্গে গেল
পরেশ, পরেশের মা ও কালীপদ। নেপথ্যে শঙ্খ বাজিয়া উঠিল,
ভট্টাচার্যমহাশয় প্রবেশ করিলেন]

ভট্টাচার্য। লগ্ন সমুপস্থিত। আপনারা অনুমতি করুন শুভকার্যে ব্রতী হই।

সকলে। (সমস্বরে) আমরা সর্বান্তঃকরণে সম্মতি দিই ভটচায্যিমশাই, শুভকর্ম অবিলম্বে আরম্ভ করুন।

[যে আজ্ঞে, বলিয়া ভট্টাচার্যমহাশয় প্রস্থান করিলেন। গ্রামের চাষাভূষা নানা লোক নানা কাজে আসা-যাওয়া করিতেছে এবং ভিতর হইতে কলরব শুনা যাইতেছে]

দয়াল। আমারও সংশয় এসেছিল। একটা বড় কথা আছে যে, বিজয়া তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নলিনী বললে, বড় কথা নয় মামাবাবু। বিজয়ার অন্তর্যামী সায় দেয়নি। তবু তার হৃদয়ের সত্যকে লঙ্ঘন করে তার মুখের বলাটাকেই বড় করে তুলবে? শুনে অবাক হয়ে চেয়ে রইলুম। ও বলতে লাগল, কেবল মুখ দিয়ে বার হয়েছে বলেই কোন জিনিস কখনো সত্য হয়ে ওঠে না। তবু তাকেই জোর করে যারা সকলের ঊর্ধ্বে স্থাপন করে তারা সত্যকে ভালবাসে বলে করে না, তারা সত্য-ভাষণের দম্ভটাকে ভালবাসে বলে করে। আপনারা সকলে হয়ত জানেন না যে, এই ভটচায্যিমশায়ের পিতা-পিতামহ ছিলেন রায়বংশের কুল-পুরোহিত! আবার বহুদিন পরে সেই বংশেরই একজনকে যে এ-বিবাহে পৌরোহিত্য বরণ করতে পেলুম এ আমার বড় সান্ত্বনা। সকলের আশীর্বাদে এ বিবাহ কল্যাণময় হোক, নির্বিঘ্নে হোক এই আপনাদের কাছে আমার প্রার্থনা।

সকলে। আমরা আশীর্বাদ করি বর-কন্যার মঙ্গল হোক!