শুনে নয়নদা যেন চমকে উঠল। থানায়? পুলিশের হাতে?
হাঁ। ও যেমন মানুষ মেরেছে, তারাও তেমনি ওকে ফাঁসি দিক। যেমন কর্ম তেমন ফল।
নয়ন খানিকক্ষণ চুপ করে রইল, তার পরে তারে একটা লাঠির ঠেলা দিয়ে বললে—ওরে ওঠ্।
কিন্তু কোন সাড়া নেই। নয়ন বললে, ব্যাটা মরে গেল নাকি? যে দুর্বল সিং—দু'দিন হয়ত পেটে একমুঠো অন্নও নেই—আবার পথে এসেছে লোক ঠ্যাঙাতে। যা ব্যাটা, দূর হ। উঠে ঘরকে যা।
সে কিন্তু তেমনিই রইল পড়ে। নয়ন তখন হেঁট হয়ে তার নাকে হাত দিয়ে বললে, না মরেনি। অজ্ঞান হয়ে আছে। জ্ঞান হলে আপনিই ঘরে যাবে। চল দাদা, আমরাও ঘরে যাই। অনেক দেরি হয়ে গেল, ঠাকুরমা ভাবচে।
পথে যেতে যেতে বললাম, কেন ছেড়ে দিলে নয়নদা, পুলিশে ধরিয়ে দিলে বেশ হতো।
কেন দাদাভাই?
বেশ ফাঁসি হয়ে যেত। খুন করলে ফাঁসি হয় আমাদের পড়ার বইয়ে লেখা আছে।
আছে নাকি দাদা?
আছে বৈ কি। চলো না বাড়ি গিয়ে তোমাকে বই খুলে দেখিয়ে দেব।
নয়ন বিস্ময়ের ভান করে বললে, বলো কি দাদা, একটা মানুষ মারার বদলে আর একটা মানুষ মারা?
হাঁ, তাই ত। সেই ত তার উচিত সাজা। আমরা পড়েছি যে!
নয়ন একটুখানি হেসে বললে,—কিন্তু, সব উচিতই যে সংসারে হয় না, দাদাভাই।
কেন হয় না নয়নদা?
নয়ন হঠাৎ জবাব দিলে না, একটু ভেবে বললে,—বোধ হয় জগতে সবাই ধরিয়ে দিতে পারে না বলে।
কেন যে পারে না, কেন যে মানুষে এ অন্যায় করে, সে তত্ত্ব সেদিনও জানিনি, আজও না। তবু, এই কথাটাই ভাবতে ভাবতে খানিকটা পথ চলার পরে জিজ্ঞাসা করলাম,—আচ্ছা নয়নদা, ওরা ফিরে গিয়ে আবার ত মানুষ মারবে?
নয়ন বললে, না দাদা, আর মারবে না! আমি বেঁচে থাকতে এ কাজ ওরা আর কখনো করবে না।
জবাবটায় বেশ প্রসন্ন হতে পারলাম না। ফাঁসি হওয়াই ছিল আমার মনঃপূত। বললাম,—কিন্তু ওরা বেঁচে ত গেল। শাস্তি ত হলো না।