সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
এদিকে সদানন্দ ফিরিয়া আসিল। সমস্ত পথটা সে বড় অন্যমনস্ক হইয়া চলিতেছিল। পথে যে-কেহ ডাকিয়া বলিল, দাদাঠাকুর কোত্থেকে? দাদাঠাকুর ঘাড় নাড়িয়া বলিল, 'হুঁ'।—কোথায় গেছলে? সদানন্দ দাঁড়াইয়া মুখপানে চাহিয়া বলিল, বাড়ি যাচ্ছি। তাহার হালের গরু ততক্ষণ একজনের বেগুনক্ষেতে ঢুকিয়াছে, সে গালি দিতে দিতে তাহার পশ্চাৎ ছুটিল, সদানন্দও পথ বাহিয়া চলিতে লাগিল। সে গরু ফিরাইয়া আনিয়া আপনা-আপনি বলিল, ক্ষেপার মনটা আজ দেখচি বড় ভাল নয়, বেশ লোকটি!
রামুমামা নন্দ ময়রার দোকানঘরের চৌকাঠে ঠেস দিয়া তামাক খাইতেছিলেন, একপা ধূলা সদানন্দকে দেখিয়া বলিলেন, ও সদানন্দ, চার-পাঁচদিন তোমাকে যে দেখিনি, ছিলে কোথা?
সদানন্দ না ফিরিয়া পশ্চাৎদিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিল, ওখানে!
কোথায়? বামুনপাড়ায়?
হুঁ।
এতদিন ধরে?
হুঁ। সদানন্দ হনহন করিয়া চলিতে লাগিল।
রামুমামা বিরক্ত হইয়া বলিলেন, দূর, কি যে বলে কিছু বোঝা যায় না।
সদানন্দ সেকথা শুনিল না বা শুনিতে পাইল না, একেবারে শুভদার নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইল। নোটখানা নিকটে রাখিয়া বলিল, কোন সন্ধান হইল না।
শুভদা বলিলেন, তবে মিথ্যে ক্লেশ পাইলে।
সদানন্দ চুপ করিয়া রহিল।
শুভদা আবার বলিলেন, তবে এ টাকা লইয়া কি করিব?
স। আপনার যাহা ইচ্ছা। টাকা আপনার ইচ্ছা হয় বিলাইয়া দিন, নাহয় রাখিয়া দিন, যদি কখন সন্ধান পাওয়া যায়, ফিরাইয়া দিবেন।
শুভদা অগত্যা তাহা বাক্সবন্ধ করিয়া রাখিল।
সদানন্দ বলিল, হারাণকাকা কোথায়?
শুভদা পার্শ্বের ঘর দেখাইয়া বলিল, শুইয়া আছেন।
কোথাও যান নাই?
গিয়াছিলেন—এইমাত্র ফিরিয়া আসিয়াছেন।
সেদিন সন্ধ্যার সময় বড় ঝড়বৃষ্টি করিয়া আসিল। শুভদা সকাল সকাল রন্ধনাদি শেষ করিয়া লইল। হারাণবাবু আহারাদি করিয়া বলিলেন, কিছু পয়সা দাও।
আজ আর কোথাও যেও না; আকাশে মেঘ কোরে আছে, রাত্রে যদি জল হয়?
হোলেই বা।