এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  বড়দিদি         
পরিচ্ছেদ: / 10
পৃষ্ঠা: / 56
সুরেন্দ্রনাথ পদব্রজে চলিলেন। একবার চাহিয়া দেখিলেন–জামার উপর অনেক ফোঁটা রক্ত ধূলায় জমিয়া গিয়াছে। ওষ্ঠ বাহিয়া তখনও রক্ত পড়িতেছে। নদীতে নামিয়া অঞ্জলি ভরিয়া জল পান করিলেন, তার পর প্রাণপণে ছুটিয়া চলিলেন। পায়ে আর জুতা নাই–সর্বাঙ্গে কাদা, মাঝে মাঝে শোণিতের দাগ! বুকের উপর কে যেন রক্ত ছিটাইয়া দিয়াছে।

বেলা পড়িয়া আসিল। পা আর চলে না– যেন এইবার শুইতে পারিলেই জন্মের মত ঘুমাইয়া পড়িবে–তাই যেন অন্তিম শয্যায় এই জীবনের মহা-বিশ্রামের আশায় সে উন্মত্তের


মত ছুটিয়া চলিয়াছে। এ দেহে যতটুকু শক্তি আছে, সমস্ত অকাতরে ব্যয় করিয়া শেষশয্যা আশ্রয় করিবে, আর উঠিবে না!

নদীর বাঁকের পাশে–একখানা নৌকা না? কলমীশাকের দল কাটিয়া পথ করিতেছে! সুরেন্দ্র ডাকিল, 'বড়দিদি '! শুষ্ককণ্ঠে শব্দ বাহির হইল না–শুধু দুই ফোঁটা রক্ত বাহির হইল।

'বড়দিদি '– আবার দুই ফোঁটা রক্ত ।

কলমীর দল নৌকার গতি রোধ করিতেছে। সুরেন্দ্রর কাছে আসিয়া পড়িল।

আবার ডাকিল, 'বড়দিদি'।

সমস্ত দিনের উপবাস ও মনঃকষ্টে মাধবী নির্জীবের মত নিদ্রিত সন্তোষকুমারের পার্শ্বে চক্ষু মুদিয়া শুইয়াছিল। সহসা কানে শব্দ পোঁছিল : পুরাতন পরিচিত স্বরে–কে ডাকে না!

মাধবী উঠিয়া বসিল। ভিতর হইতে মুখ বাড়াইয়া দেখিল। সর্বাঙ্গে ধূলা-কাদা-মাখা–মাষ্টারমহাশয় না?

ও নয়নতারার মা, মাঝিকে শীগগির নৌকা লাগাতে বল্‌।

সুরেন্দ্রনাথ তখন ধীরে ধীরে কাদার উপর শুইয়া পড়িতেছিলেন।

সকলে মিলিয়া সুরেন্দ্রনাথকে ধরাধরি করিয়া নৌকায় তুলিয়া আনিল। মুখে-চোখে জল দিল। একজন মাঝি চিনিত, সে কহিল, লাল্‌তাগাঁয়ের জমিদার। মাধবী ইষ্ট-কবচসুদ্ধ স্বর্ণহার কন্ঠ হইতে খুলিয়া লইয়া তাহার হাতে দিয়া বলিল, লাল্‌তাগাঁয়ে