এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  নূতন প্রোগ্রাম         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 6
আষ্টেপৃষ্ঠে তাহাতে নামধাম-সমেত লেবেল আঁটা, অর্থাৎ গোলমালে ক্ষোয়া না যায়। কহিল, দিন ত মশাই একখানা প্রমাণ শাড়ি বুনে।

কর্মীরা কহিল—এতে কি কখনো শাড়ি হয়?
হয় না? আচ্ছা, শাড়িতে কাজ নেই, ধুতিই বুনে দিন, কিন্তু দেখবেন, বহর ছোট করে ফেলবেন না যেন।

কর্মীরা—এতে ধুতিও হবে না।

হবে না কিরকম? আচ্ছা ঝাড়া দশ হাত না হোক ন'হাত সাড়ে ন'হাত ত হবে? বেশ তাতেই চলবে। আচ্ছা চললুম।—এই বলিয়া সে চলিয়া যাইতে উদ্যত।

কর্মীরা প্রাণের দায়ে তখন চীৎকার করিয়া হাতমুখ নাড়িয়া বুঝাইবার চেষ্টা করিত যে, এ ঢাকাই মসলিন নয়,—খদ্দর। এক মুঠো সূতার কাজ নয় মশাই, অন্ততঃ এক ধামা সূতার দরকার।

কিন্তু এ ত গেল বাহিরের লোকের কথা। কিন্তু তাই বলিয়া কর্মীদের উৎসাহ-উদ্যম অথবা খদ্দর-নিষ্ঠার লেশমাত্র অভাব ছিল, তাহা বলিতে পারিব না। প্রথম যুগের মোটা খদ্দরের ভারের উপরেই প্রধানতঃ patriotism নির্ভর করিত।

সুভাষচন্দ্রের কথা মনে পড়ে। তিনি পরিয়া আসিতেন দিশি সামিয়ানা তৈরির কাপড় মাঝখানে সেলাই করিয়া। সমবেত প্রশংসার মৃদু গুঞ্জনে সভা মুখরিত হইয়া উঠিত, এবং সেই পরিধেয় বস্ত্রের কর্কশতা, দৃঢ়তা, স্থায়িত্ব ও ওজনের গুরুত্ব কল্পনা করিয়া কিরণশঙ্কর প্রমুখ ভক্তবৃন্দের দুই চক্ষু ভাবাবেশে অশ্রুসজল হইয়া উঠিত।

কিন্তু সামিয়ানার কাপড়ে কুলাইল না, আসিল লয়ন-ক্লথের যুগ। সেদিন আসল ও নকল কর্মী এক আঁচড়ে চিনা গেল। যথা, অনিলবরণ—দীর্ঘ শুভ্রদেহের লয়নটুকু মাত্র ঢাকিয়া যখন কাঠের জুতা পায়ে খটাখট শব্দে সভায় প্রবেশ করিতেন, তখন শ্রদ্ধায় ও সম্ভ্রমে উপস্থিত সকলেই চোখ মুদিয়া অধোবদনে থাকিত। এবং তিনি সুখাসীন না হওয়া পর্যন্ত কেহ চোখ তুলিয়া চাহিতে সাহস করিত না। সে কি দিন! “My only answer is Charka” অধোমুখে বসিয়া সকলেই এই মহাকাব্য মনে মনে জপ করিয়া ভাবিত, ইংরাজের আর রক্ষা নাই, ল্যাঙ্কাশায়ারে লালবাতি জ্বালিয়া ব্যাটারা মরিল বলিয়া। আজ অনিলবরণ বোধ করি যোগাশ্রমে ধ্যানে বসিয়া ইহারই প্রায়শ্চিত্ত করিতেছেন।