তারপর, বসন্ত যখন হায় হায় করতে করতে চলে যায়—তখন অভাগী কুঁড়ি ধড়ফড় করে তিনদিনের মধ্যে ফুটে উঠে। তখন তার সাত-শ' খোয়ার। কড়া সূর্যির তাত তার উপর কি নির্দয়ভাবে পড়ে বিদ্রূপ করতে থাকে! দাঁড়কাকের হাহাক্কার শুনতে শুনতে দিনশেষে সে ডালের নীচে এলিয়ে পড়ে!
আমি ফুল নই। তাই এলিয়ে পড়লুম না। ঝরে পড়লে ত সব চুকেই যেত!
খুব গরীবের ঘরে আমার জন্ম হয়নি। বাবা এমন ডাকসাইটে বড়লোকও কিছু ছিলেন না। কিন্তু কাল হল আমার পোড়া রূপ।
শুনতে পাই—আমার দুধে-রঙে আলতার আভা ছিল। কালো চুল পা অবধি লুটিয়ে পড়ত। আরো কত-কি!
এ-সব আমার শোনা কথা। সত্যি-মিথ্যে ভগবান জানেন। তোমরা কি তার পরিচয় কিছু পাচ্ছ?
কি দেখছ? না, না—ও রং নয়—আমার ঠোঁট অমনিতরই। এটা? টিপ নয়—এটা একটা তিল! ওটা জন্ম থেকেই আছে।
তাই দেখেই ত সন্ন্যাসী মিন্সে বলেছিল যে, আমি হবো রাজরানী। আহা! যদি না বলত! মিন্সে যা বললে, তাই হল গা!
আহা, যদি না সেদিন সকালে সাজিহাতে বেরুতাম! গঙ্গাজলে কি শিবপূজো হয় না? মা'র ছিল সবটাতেই যেন বাড়াবাড়ি! ফুল তাঁর চাই-ই, নইলে শিবপূজো হবে না। আর তিনিই বা জানবেন কি করে? আর রাজারই বা কি আক্কেল! দুনিয়ার এত পথ থাকতে—তাঁর যাবার রাস্তা হল সেই আমাদের পুকুরের ধারের সরু গলিটা দিয়ে!
শুনলাম, রাজা আসছেন, রাজা আসছেন—হাঁ করে রাজা দেখছি। মনে করলাম, বুঝি বা তাঁর চারটে হাত দেখাব। হায় রে, তখন যদি ছুট মেরে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ি!
রাজা ত বাপু কত লোক দেখেছিল। কপাল ত আর কারুর ধরল না!
সেদিন থেকে লোকের হাসি সইতে পারিনে। মনে হয়, ওই হাসির নীচে যেন ছুরির বাঁকা ধারটা ঝিকঝিক করছে।