এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  ক্ষুদ্রের গৌরব         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 5
আর একবার জানালা দিয়া দেখিলসদানন্দ পূর্বের মত মুখ নিচু করিয়া বসিয়া আছে। তাহার এ ভাব রোহিণীর নিকট নূতন নহেসে বিলক্ষণ বুঝিয়াছিল আজ অন্য আশা নাই। তাই গম্ভীরভাবে কহিল “সদাশুগে যাকাল সকালে আবার আসব।”

রোহিণী একটু বিরক্ত হইয়া চলিয়া যাইতেছিলকিন্তু পথে আসিয়াই তাহার মনে পড়িল—সেই কোমল করুণ “আহা”তখন সে হাততালি দিয়া গান ধরিল“যমুনাপুলিনে বসে কাঁদে রাধা বিনোদিনীবিনে সেইবিনে সেই—”

কিছুক্ষণ বিরামের পর আবার সেই গান সদানন্দের কর্ণে প্রবেশ করিবামাত্র সে যুক্তকরে ঊর্ধ্বনেত্রে কাঁদিয়া কহিল— “দয়াময় তুমি ফিরিয়া এস।”

রাধার দুঃখ সে হৃদয়ে অনুভব করিয়াছে, তাই কাঁদিয়াছে; ক্ষুদ্র কবিতার ক্ষুদ্র একটি চরণ তাহার সমস্ত হৃদয় মন্থন করিয়া তুলিয়া ধরিয়াছে। সেই নির্মল নীল যমুনা; সেই পিককুহরিত জ্যোংস্নাপ্লাবিত সখী-পরিবৃত কুঞ্জবন, সেই বকুল, তমাল, কদম্বমূল; সেই মৃতসঞ্জীবনী বংশী-স্বর; মান অভিমান মিলন, তাহার পর শতবর্ষব্যাপী সেই সর্বগ্রাসী বিরহ! আর ছায়ার মত সেই ভ্রাতৃপ্রেম মাতৃপ্রেম—দয়া, ধর্ম, পুণ্য—এবং তাহার সর্বনিয়ন্তা পূর্ণব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণ!

এত কথা, এই দীপ্ত অথচ স্নিগ্ধভাব, এত মাধুরী প্রণোদিত করিবার গৌরব কি এই অসম্পূর্ণ নিতান্ত সাধারণ পদটির? রচয়িতার, না গায়কের? কিন্তু পদটি যদি “যমুনা-পুলিনে বসে কাঁদে রাধা বিনোদিনী” না হইয়া “কাঁদে শরৎশশী” হইততাহা হইলে সদানন্দের চক্ষে এত শীঘ্র এমনি করিয়া জল আসিত কি না তাহাতে বিলক্ষণ সন্দেহ। সে হয়ত বিরহ বেদনাটা ছাড়িয়া দিয়া প্রথম শরৎশশীর বাস্তব নির্ণয় করিতে বসিত। শরৎশশী রাধার বিশেষণ হইতে পারে কি না তাহা বেশ করিয়া আলোচনা করিয়া পরে অশ্রুজল সম্বন্ধে মীমাংসা করিত। কিন্তু গায়ক যদি গায়িতেন “ঘরের কোণেতে বসে কাঁদে শরৎশশী” তাহা হইলে অনুমান হয় করুণ রসের পরিবর্তে হাস্যরসেরই উদ্রেক হইত। যেন ঘরের কোণেতে বসিয়া ক্রন্দনটা ক্রন্দন নামের যোগ্য হইতে পারে নাকিংবা শরৎশশীর বিরহ হইতে নাইঅথবা হইলেও কান্নাকাটি করা তাহার পক্ষে উপযুক্ত হয় নাই। তাহা হইলে দেখা গেল যেবিরহবেদনাজনিত দুঃখই সদানন্দের অশ্রু জলের পূর্ণ হেতু নহে। তাহা যদি হইততাহা হইলে শরৎশশীর দুঃখে তাহাকে অশ্রুজল লইয়া এরূপ মারামারি করিতে হইত না।