দুই
রূপনারায়ণ নদীর ধারে পানিত্রাসে আমার বাড়ির পাশ দিয়ে ঘাটাল স্টীম নেভিগেশান কোম্পানীর স্টীমার ও লঞ্চ চলে। কোলাঘাট হইতে ঘাটাল পর্যন্ত ইহাদের গতায়াত। হোরমিলার কোম্পানীও এই লাইনে তাহাদের স্টীমার চালায়। গত ছয় বৎসর কাল এই দুইটি কোম্পানীর মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করিয়া আসিতেছি। হোরমিলার কোম্পানীর স্টীমার বড়, অথচ কম জলে চলিতে পারে; সুতরাং সারা বৎসর তাহাদের চলায় বাধা হয় না। এ ছাড়া তাহাদের অর্থের অভাব নাই; ফলে ভাড়া কমাইয়া যাত্রীদের সিগারেট উপহার দিয়া, একতলা ও দোতলার ভাড়া সমান করিয়া এবং অধিকসংখ্যক স্টীমার দিয়া তাহারা দেশী কোম্পানীর পক্ষে প্রতিযোগিতা কঠোর ও নিদারুণ করিয়া তুলিয়াছে। দেশী কোম্পানীর স্টীমার ছোট, জল ভাঙ্গে বেশী, সেইজন্য সারা বৎসর সকল সময় চলিতে পারে না। তথাপি, এতপ্রকার অসুবিধাসত্ত্বেও দেশী কোম্পানীর স্টীমারে লোক যথেষ্ট হয়। ইহার একটা বড় কারণ এই যে, যাত্রিগণের অধিকাংশই এই স্বদেশী 'ঘাটাল কোম্পানীর' অংশীদার এবং প্রায় সমস্ত দেশের লোকই এখন দেশী কোম্পানীকে নানাভাবে সাহায্য করিতে চায়। এই-সকল কারণে এবং ঘাটাল কোম্পানীর ডিরেক্টারদের কর্মপটুতা, সততা ও নিঃস্বার্থতার জন্য এই ধনী, বিদেশী ও শক্তিমান প্রতিদ্বন্দ্বীর সহিত লড়াই করিয়া, প্রতি বৎসর ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াও দেশী কোম্পানীটি এখনও টিকিয়া আছে।
এই দেশী কোম্পানীটিকে এই অসম প্রতিযোগিতার হাত হইতে রক্ষা করিয়া বাঁচাইয়া তোলা দেশের লোকের একান্ত কর্তব্য। বহুদিন হইতে ইহার সকল দিক দেখিয়া ও চিন্তা করিয়া বুঝিয়াছি যে, যাতায়াতের যথেষ্ট ও নিয়মিত সুবিধা করিয়া দিতে পারিলেই যাত্রীরা দেশের বর্তমান অবস্থায় বিদেশী কোম্পানীকে ছাড়িয়া দেশী কোম্পানীরই পৃষ্ঠপোষকতা করিবে। ইহার জন্য প্রয়োজন হোরমিলার কোম্পানীর 'শীতলা'র মত একখানি বড় স্টীমার।
ইতিপূর্বে ঘাটালের বিশিষ্ট উকীল, মোক্তার, ডাক্তার, মহাজন প্রভৃতি কোম্পানীর পরিচালকগণ নিজেদের এবং এগার শত যাত্রীর মধ্যে ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা তুলিয়া দুইটি ছোট স্টীমার ও একটি মোটর লঞ্চ ক্রয় করিয়া আজ ছয় বৎসর এই লড়াই চালাইতেছেন। তাহার উপর বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা-বিপর্যয়ে ঘাটালের জনসাধারণের যে অবস্থা হইয়াছে, তাহাতে সেখান হইতে আরও বেশীসংখ্যক অংশীদার পাওয়ার আশা করা বর্তমানে শুধু অন্যায় নহে, নিষ্ঠুর হৃদয়হীনতা। সেইজন্য আমি আজ এই আবেদন লইয়া দেশবাসীর সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছে।