এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  বিচার         
পরিচ্ছেদ: / 5
পৃষ্ঠা: / 8
তিন

যমুনা কহিল, 'ভাই মলিনা, ভরত সিংহকে বড় দেখিতে ইচ্ছা করে, সে নাকি বড় যোদ্ধা, বড় সাহসী বীরপুরুষ।'

মলিনার মুখের উপর কাল ছায়া পড়িল, বলিল, 'বাবা বলেন, তাহার তুল্য যোদ্ধা রাজপুতের মধ্যে নাই, শত হস্তের মধ্যে কোন মৃগই তাহার বর্শার ফলা ছাড়াইয়া যাইতে পারে না, বাহুর এত বলের কথা কোথাও শুনিয়াছ কি?'

যমুনা বলিল, 'আহা যদি প্রাণদণ্ডের আজ্ঞা না দিতাম।'

মলিনা আগ্রহের সহিত কহিল, 'সেই ভাল, প্রাণদণ্ডাজ্ঞা মার্জনা করিয়া দাও।'

যমুনা মাথা নাড়িয়া বলিল, 'মহারানীর আজ্ঞার প্রতিরোধ করিবার ক্ষমতা আমার নাই।'

মলিনা বলিল,—'মহারানী হইয়া কেন এমন করিলে?'

'সে রাজ্যের শত্রু—মহারানীর শত্রু, সিংহাসন তাহার প্রাণ লইবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছে—আমি নিজে তত হই নাই। সে কথা যাউক, কিন্তু একবার তাহাকে দেখিতে ইচ্ছা করে। পর্বতের মত ভীম শরীর, গালপাট্টা দাড়ি, হস্তপদগুলা লৌহের মত—চক্ষু দুটি সাদা রক্তবর্ণ—কেমন মলিনা, একবার দেখিতে সাধ হয় না?'

'হয় বৈ কি! বলে দাও এইখানে প্রাসাদের নীচে তাহাকে দাঁড় করাক, আমরা গবাক্ষ দিয়া দেখিব।'

'ছিঃ, বীরপুরুষের কি অপমান করিতে আছে? ইহাতে তাহার বড় ক্লেশ হইবে—আজ সন্ধ্যার সময় আমরা পুরুষের বেশে কারাগারে গিয়া দেখিয়া আসিব।'

সন্ধ্যার পর তাহারা দুইটি কিশোর রাজপুত সাজিয়া দ্বারপালের নিকট রানীর অনুজ্ঞাপত্র দেখাইয়া প্রবেশ করিল। ঘরে ঘরে কত শৃঙ্খলাবদ্ধ রাজপুত বন্দী বসিয়া আছে দেখিতে পাইল। দাড়ি গোঁফ, গালপাট্টা, লোহার মত শরীর এমন কতজন কাতরমুখে সময় কাটাইতেছে দেখা গেল, কিন্তু কাহাকেও ভরত সিংহের মত বোধ হইল না।

দুইজনের মধ্যে কেহ বলিল, 'ওই।' কেহ বলিল, 'দূর, একি রাজপুত্রের মত দেখিতে?' দুইজনে ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখিল একটা কক্ষে প্রহরীর সংখ্যা কিছু অধিক, জিজ্ঞাসা করিল, 'এ ঘরে কে আছে?'

প্রহরী বলিল—'রাজকুমার ভরত সিংহ।'