এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  ভালমন্দ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 5
সেদিন অবিনাশ আদালত থেকে ফিরলেন হাসিমুখে। যথারীতি বেশভূষা ছেড়ে, হাত-মুখ ধুয়ে জলযোগে বসে বললেন, যাক, এতদিনে মুক্তি পাওয়া গেল ছোটবৌ। সরকারীভাবে খবর এলেও হাইকোর্টের এক বন্ধুর কাছ থেকে আজ টেলিগ্রাম পেলাম আমার জেলখানার মিয়াদ ফুরলো বলে। অধিক বিলম্ব হবে না। বিলম্ব যে হবে না তা নিজেই জানতাম।
আলোকলতা অনতিদূরে একটা চেয়ারে বসে সেলাই করছিলেন, এবং কন্যা শাশ্বতী পিতার পাশে বসে তাঁকে বাতাস করছিল, শুনে দুজনেই চমকে উঠলেন।
স্ত্রী প্রশ্ন করলেন, এ কথার মানেটা কি?
অবিনাশ বললেন, শুনেছ বোধ হয় কে একজন গোবিন্দপদবাবু এবারেও আমাকে ডিঙিয়ে মাস-ছয়েকের জন্যে সব-জজ হয়ে গেলেন। হগসাহেব হাইকোর্টে আসা পর্যন্ত বছর-তিনেক ধরে এই ব্যাপারই চলচে—একটা কথাও বলিনি। ভেবেছিলাম ওদের অন্যায়টা একদিন ওরা নিজেরাই বুঝবে, কিন্তু দেখলাম সে হবার নয়। অন্ততঃ ও লোকটি থাকতে নয়। অবিচার এতদিন সয়েছিলাম, কিন্তু আর সইলে মনুষ্যত্ব যাবে।
কাল বিকেলেই সদরআলার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এমনি ধরনের একটি কথা আলোকলতা আভাসে-ইঙ্গিতে শুনে এসেছিলেন কিন্তু অর্থ তার বুঝতে পারেন নি। এখনো পারলেন না, শুধু বললেন, তদবির-তাগাদা না করলে আজকালকার দিনে কোন্‌ কাজটা হয়? মনুষ্যত্ব যাতে না যায় তার কি করেছ শুনি?
অবিনাশ বললেন, তদবির-তাগাদা পারিনে, কিন্তু যেটা পারি সেটা করেছি বৈ কি।
আলোকলতা স্বামীর মুখের পানে চেয়ে এখনও তাৎপর্য ধরতে পারলেন না, কিন্তু ভয় পেলেন। বললেন, সেটা কি শুনি না? কি করেছ বলো না?
অবিনাশ বললেন, সেটা হচ্ছে কাজে ইস্তফা দেওয়া—তা দিয়েছি।
আলোকের হাত থেকে সেলাইটা মাটিতে পড়ে গেল। বজ্রাহতের মতো কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে থেকে বললেন, বলো কি গো? এতগুলো লোককে না খেতে দিয়ে উপোস করিয়ে মারবার সঙ্কল্প করেছ? কাজ ছাড়ো দিকি—আমি তোমার দিব্যি করে বলচি সেই দিনই গলায় দড়ি দিয়ে মরবো।
অবিনাশ স্থির হয়ে রইলেন, জবাব দিলেন না।
দরখাস্ত যদি দিয়ে থাকো, কালই উইথড্র করবে বলো?
না।
না কেন? মনের দুঃখে ঝোঁকের মাথায় কত লোকেই ত কত কি করে ফেলে, তার কি প্রতিকার নেই?
অবিনাশ আস্তে আস্তে বললেন, ঝোঁকের মাথায় ত আমি করিনি ছোটবৌ। যা করেছি ভেবে-চিন্তেই করেছি।
উইথড্র করবে না?
না।