এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

নাটক  :  রমা         
পরিচ্ছেদ: / 4
পৃষ্ঠা: / 76
বেণী। সে ত জানি দিদি, আর যেই কেন না যাক, তোরা কিছুতেই সে বাড়িতে পা দিবিনে। তবে শুনতে পেলাম ছোঁড়া নিজে গিয়ে সমস্ত বাড়ি-বাড়ি বলে আসবে। বজ্জাতি বুদ্ধিতে সে তার বাপের ওপরে যায়। যদি সত্যই আসে কি বলবে?

রমা। আমি কিছুই বলবো না বড়দা,—বাইরের দরোয়ান তার জবাব দেবে।

মাসী । দরোয়ান কেন লা, আমি বলতে জানিনে? নচ্ছার ব্যাটাকে এমনি বলাই বোলব যে, বাছাধন জন্মে কখনো আর মুখুয্যেবাড়িতে মাথা গলাবে না। তারিণী ঘোষালের ছেলে ঢুকবে নেমন্তন্ন করতে আমার বাড়িতে! আমি কিছুই ভুলিনি বেণীমাধব। তারিণী এই ছেলের সঙ্গেই আমার রমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখনো ত যতীন জন্মায় নি, ভেবেছিলো যুদু মুখুয্যের সমস্ত বিষয়টা তা হলে মুঠোর মধ্যে আসবে। বুঝলে না বাবা বেণী!

বেণী। বুঝি বৈ কি মাসী, সব বুঝি।

মাসী । বুঝবে বৈ কি বাবা, এ ত পড়েই রয়েচে। আর তা যখন হল না তখন ঐ ভৈরব আচায্যিকে দিয়ে কি-সব জপ-তপ, তুকতাক করিয়ে মায়ের কপালে আমার এমনি আগুন জ্বেলে দিলে যে, ছ'মাস পেরুল না বাছার হাতের নোয়া মাথার সিঁদুর ঘুচে গেল। ছোট জাত হয়ে চায় কিনা মুখুয্যের মেয়েকে বৌ করতে! তেমনি হারামজাদার মরণও হয়েছে। সদরে গেল মকর্দমা করতে আর ঘরে ফিরতে হল না। এক ব্যাটা, তার হাতের আগুনটুকু পর্যন্ত পেলে না। ছোট জাতের মুখে আগুন!
রমা। কেন মাসী, তুমি লোকের জাত তুলে কথা কও? তারিণী ঘোষাল বড়দারই ত আপনার খুড়ো। বামুন মানুষকে ছোট জাত বল কি করে? তোমার মুখে যেন কিছু বাধে না।

বেণী। (সলজ্জে) না রমা, মাসী সত্যি কথাই বলচেন। তুমি কতবড় কুলীনের মেয়ে, তোমাকে কি আমরা ঘরে আনতে পারি বোন? ছোটখুড়োর এ কথা মুখে আনাই বেয়াদবি। আর তুকতাকের কথা যদি বল ত সে সত্যি। দুনিয়ায় ছোটখুড়ো আর ভৈরবের অসাধ্য কাজ কিছু নেই। রমেশ আসতে না আসতেই ঐ ব্যাটাই ত জুটে গিয়ে হয়েছে তার মুরুব্বি।

মাসী । সে ত জানা কথা বেণী। ছোঁড়া বছর দশ-বারো ত দেশে আসেনি।—সেই যে মামারা এসে কাশী না কোথায় নিয়ে গেল আর কখনো এ মুখো হতে দিলে না। এতকাল ছিল কোথায়? করছিল কি?

বেণী। কি করে জানবো মাসী! ছোটখুড়োর সঙ্গে তোমাদেরও যে ভাব আমাদেরও তাই। শুনচি, এতদিন বোম্বাই না কোথায় ছিল। কেউ বলচে ডাক্তারি পাস করেচে, কেউ বলচে উকিল হয়েচে,—আবার কেউ বলচে সব ফাঁকি। ছোঁড়া নাকি পাঁড় মাতাল। যখন বাড়ি এসে পৌঁছল, তখন চোখ-দুটো ছিল নাকি জবাফুলের মত রাঙা।