এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

নাটক  :  ষোড়শী         
পরিচ্ছেদ: / 4
পৃষ্ঠা: / 54
এককড়ি। (সঙ্কুচিত হইয়া) আজ্ঞে, সে যে নিষ্কর দেবোত্তর, হুজুর।

জীবানন্দ। না, দেবোত্তর এ গাঁয়ে একফোঁটা নেই। সেলামি না পেলে সমস্ত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।

এককড়ি। আজই তাকে হুকুম জানাচ্ছি।

জীবানন্দ। শুধু হুকুম জানানো নয়, টাকা তাকে দু’দিনের মধ্যে দিতে হবে।

এককড়ি। কিন্তু হুজুর—

জীবানন্দ। কিন্তু থাক এককড়ি। এই সোজা বারুইয়ের তীরে আমার শান্তিকুঞ্জ, না? —মহাবীর, পালকি তুলতে বল।

[বাহকেরা পালকি লইয়া প্রস্থান করিল

এককড়ি। যা ভেবেচি তাই যে ঘটল রে বিশু! এ যে গিয়ে সোজা শান্তিকুঞ্জেই ঢুকতে চায়।

বিশ্বম্ভর। নয় ত কি তোমার কাছারির খোঁয়াড়ে গিয়ে ঢুকতে চাইবে?

এককড়ি। সেখানে হয়ত ঢোকবার পথ নেই। হয়ত দোর-জানালা সব চোরে চুরি করে নিয়ে গেছে, হয়ত বা ঘরে ঘরে বাঘ-ভালুকে বসবাস করে আছে—সেখানে কি যে আছে আর কি যে নেই, কিছুই যে জানিনে বিশ্বম্ভর।

বিশ্বম্ভর। আমি কি জানি নাকি তোমার দোর-জানালার খবর? আর বাঘ-ভালুকের কাছে ত আমি খাজনা আদায়ে যাইনি গো!

এককড়ি। এই রাত্তিরে কোথায় আলো, কোথায় লোকজন, কোথায় খাবার-দাবার—

বিশ্বম্ভর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদলে লোকজন জুটতে পারে, কিন্তু আলো আর খাবার-দাবার—

এককড়ি। তোর কি! তুই ত বলবিই রে নচ্ছার পাজী ব্যাটা হারামজাদা—

[প্রস্থান

দ্বিতীয় দৃশ্য

শান্তিকুঞ্জ

[বারুই নদীতীরে বীজগাঁ'র জমিদার ৺রাধামোহনের নির্মিত বিলাসভবন 'শান্তিকুঞ্জ'। সংস্কারের অভাবে আজ তাহা জীর্ণ, শ্রীহীন, ভগ্নপ্রায়। তাহারই একটা কক্ষে তক্তপোশের উপর বিছানা, বিছানায় চাদরের অভাবে একটা বহুমূল্য শাল পাতা; শিয়রের দিকে একটা গোল টেবিল, তাহাতে মোটা বাঁধানো একখানা বইয়ের উপর আধপোড়া একটা মোমবাতি। তাহারই পাশে একটা পিস্তল। হাতের কাছে একটা টুল, তাহাতে সোডার বোতল, সুরাপূর্ণ গ্লাস ও মদের বোতল। বোতলটা প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে। পার্শ্বে দামী একটা সোনার ঘড়ি—ঘড়িটা ছাইয়ের আধারস্বরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে—আধপোড়া একটা চুরুট হইতে তখনও ধূমের রেখা উঠিতেছে। সম্মুখের দেওয়ালে গোটা-দুই নেপালী কুকরী টাঙ্গানো, কোণে একটা বন্দুক ঠেস দিয়া রাখা, তাহারই অদূরে মেঝের উপর একটা শৃগালের মৃতদেহ হইতে রক্তের ধারা বহিয়া শুকাইয়া গিয়াছে। ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত কয়েকটা শূন্য মদের বোতল; একটা ডিসে উচ্ছিষ্ট ভুক্তাবশেষ তখনও পরিষ্কৃত হয় নাই, সন্নিকটে একখানা দামী ঢাকাই চাদরে হাত মুছিয়া ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছে—সেটা মেঝেতে লুটাইতেছে। জীবানন্দ চৌধুরী বিছানায় আড় হইয়া পড়িয়া। পায়ের দিকের জানালাটা ভাঙ্গা, তাহার ফাঁক দিয়া বাহিরের একটা গাছের ডালের খানিকটা ভিতরে ঢুকিয়াছে। দুইদিকে দুইটি দরজা—দরজা ঠেলিয়া জীবানন্দের সেক্রেটারি প্রফুল্ল প্রবেশ করিল]

প্রফুল্ল। সেই লোকটা এখানেও এসেছিল দাদা।

জীবানন্দ। কে বল ত?

প্রফুল্ল। সেই মাদ্রাজী সাহেবের কর্মচারী, যিনি আখের চাষ আর চিনির কারখানার জন্যে সমস্ত দক্ষিণের মাঠটা কিনতে চান। সত্যই কি ওটা বিক্রি করে দেবেন?

জীবানন্দ। নিশ্চয়। আমার এখন ভয়ানক টাকার দরকার।

প্রফুল্ল। কিন্তু অনেক প্রজার সর্বনাশ হবে।

জীবানন্দ। তা হবে, কিন্তু আমার সর্বনাশটা বাঁচবে।

প্রফুল্ল। আর একটি লোক বাইরে বসে আছেন, তাঁর নাম জনার্দন রায়। আসতে বলব?