এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  একাদশী বৈরাগী         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 12
তাহার শুধু চেহারা দেখিয়াই অপূর্ব মনে মনে দমিয়া গেল। চণ্ডীমণ্ডপের উপর ঢালা বিছানা। মাঝখানে একাদশী বিরাজ করিতেছে। তাহার সম্মুখে একটা কাঠের হাতবাক্স এবং একপাশে থাক-দেওয়া হিসাবের খাতাপত্র। একজন বৃদ্ধ-গোছের গোমস্তা খালিগায়ে পৈতার গোছা গলায় ঝুলাইয়া শ্লেটের উপর সুদের হিসাব করিতেছে; এবং সম্মুখে, পার্শ্বে, বারান্দায় খুঁটির আড়ালে নানা বয়সের নানা অবস্থার স্ত্রী-পুরুষ ম্লানমুখে বসিয়া আছে। কেহ ঋণ গ্রহণ করিতে, কেহ সুদ দিতে, কেহ-বা শুধু সময় ভিক্ষা করিতেই আসিয়াছে; কিন্তু ঋণ পরিশোধের জন্য কেহ যে বসিয়াছিল, তাহা কাহারও মুখ দেখিয়া মনে হইল না।

অকস্মাৎ কয়েকজন অপরিচিত ভদ্রসন্তান দেখিয়া একাদশী বিস্ময়াপন্ন হইয়া চাহিল। গোমস্তা শ্লেটখানা রাখিয়া দিয়া কহিল, কোত্থেকে আসচেন?

অপূর্ব কহিল, কালীদহ থেকে।

মশায় আপনারা?

আমরা সবাই ব্রাহ্মণ।

ব্রাহ্মণ শুনিয়া একাদশীর সসম্ভ্রমে উঠিয়া দাঁড়াইয়া ঘাড় ঝুঁকাইয়া প্রণাম করিল; কহিল, বসতে আজ্ঞা হোক।

সকলে উপবেশন করিলে একাদশী নিজেও বসিল। গোমস্তা প্রশ্ন করিল, আপনাদের কি প্রয়োজন?

অপূর্ব লাইব্রেরীর উপকারিতা-সম্বন্ধে সামান্য একটু ভূমিকা করিয়া চাঁদার কথা পাড়িতে গিয়া দেখিল, একাদশীর ঘাড় আর একদিকে ফিরিয়া গিয়াছে। সে খুঁটির আড়ালের স্ত্রীলোকটির সম্বোধনের করিয়া কহিতেছে, তুমি কি ক্ষেপে গেলে হারুর মা? সুদ ত হয়েচে কুল্‌লে সাত টাকা দু’আনা; যদি দু’আনাই ছাড় করে নেবে, তার চেয়ে আমার গলায় পা দিয়ে জিভ বের করে মেরে ফেল না কেন?

তাহার পরে উভয়ে এমনি ধস্তাধস্তি শুরু করিয়া দিল, যেন এই দু’আনা পয়সার উপরেই তাহাদের জীবন নির্ভর করিতেছে। কিন্তু হারুর মাও যেমন স্থিরসঙ্কল্প, একাদশীও তেমনি অটল। দেরি হইতেছে দেখিয়া অপূর্ব উভয়ে বাগবিতণ্ডার মাঝখানেই বলিয়া উঠিল, আমাদের লাইব্রেরীর কথাটা—

একাদশীর মুখ ফিরাইয়া বলিল, আজ্ঞে, এই যে শুনি;—হাঁ রে নফর, তুই কি আমাকে মাথায় পা দিয়ে ডুবুতে চাস রে! সে দু’টাকা এখনো শোধ দিলিনে, আবার একটাকা চাইতে এসেচিস কোন লজ্জায় শুনি? বলি সুদ-টুদ কিছু এনেচিস?

নফর ট্যাঁক খুলিয়া এক আনা পয়সা বাহির করিতেই একাদশী চোখ রাঙ্গাইয়া কহিল, তিন মাস হয়ে গেল না রে? আর দু’টো পয়সা কই?

নফর হাতজোড় করিয়া বলিল, আর নেই কর্তা; ধাড়ার পোর কত হাতে-পায়ে পড়ে পয়সা চারটি ধার করে আনচি, বাকি দুটো পয়সা আসচে হাটবারেই দিয়ে যাব।