প্রিয়বাবু হাসিয়া বলিলেন, তাকে নিজের জামাতা করব মনে করেচি এবং সেই সূত্রে আপনি আমার বৈবাহিক। বলিয়া প্রিয়বাবু জোরে হাসিয়া ফেলিলেন। যে কথা মনে হওয়ায় তাঁহার হাসি পাইয়াছিল, মধুসূদন তাহা জানিতে পারিলে বোধ হয় আর কথাই কহিতেন না। ভট্টাচার্য বিস্ময়-বিস্ফারিত নয়নে কিছুক্ষণ তাঁহার মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, কাকে—কাশীনাথকে?
হাঁ।
কেন?
অত বড় কুলীনসন্তান আমি আর সন্ধান করে পেলাম না। আপনার এ বিবাহে অমত আছে কি?
অমত! এ ত পরম সৌভাগ্যের কথা—কিন্তু সে যে পাগল।
পাগল? কৈ, এ কথা ত কখন শুনি নাই?
তার পিতা পাগল ছিল।
কাশীনাথের পিতাকে প্রিয়বাবু বিলক্ষণ চিনিতেন; এবং ইহাও জানিতেন, তাঁহাকে অনেকেই পাগল বলিত। প্রিয়বাবু ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া বলিলেন, ছেলেটির নাম কি?
কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাকে ডেকে পাঠান—আমি একবার দেখব।
মধুসূদন ভট্টাচার্য তাহাকে ডাকাইতে পাঠাইলেন। যে ডাকিতে গেল, সে তাঁহারই কনিষ্ঠ পুত্র। সে গিয়া ডাকিল, কাশীদাদা! কাশীদাদা উত্তর দিল না। আবার ডাকিল, কাশীদাদা!
এবার কাশীনাথ মুখ তুলিয়া চাহিয়া বলিল, কি?
তোমাকে বাবা ডাকচেন।
কেন?
তা জানিনে। ও-গাঁয়ের জমিদারবাবু এসেচেন, তিনিই তোমাকে ডেকে পাঠিয়েচেন।
কাশীনাথ ধীরে ধীরে পুঁথি বন্ধ করিয়া বাটী আসিয়া যেখানে প্রিয়বাবু ও তাহার মাতুল মহাশয় বসিয়াছিলেন, সেইখানে আসিয়া উপবেশন করিল।
প্রিয়বাবু তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেশ করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, কাশীনাথ! কোথায় ছিলে?
ভট্টাচার্য মহাশয়ের টোলে পড়ছিলাম।
ব্যাকরণ পড়েচ?
কাশীনাথ ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, সে পড়িয়াছে।
সাহিত্য পড়েচ?
সামান্যই পড়েচি।
এখন কি পড়চ?
সাঙ্খ্য-দর্শন।
প্রিয়বাবু বলিলেন, আচ্ছা যাও, পড় গে।
কাশীনাথ চলিয়া গেল। তাহাকে কেন ডাকাইয়া আনা হইল, কেন যাইতে বলা হইল, তাহা সে কিছুই বুঝিল না। টোলে আসিয়া পুনরায় পুঁথি খুলিয়া বসিল। সে চলিয়া গেলে প্রিয়বাবু বলিলেন, কি পাগলের, না কিসের কথা বলছিলেন?
মধুসূদন কহিলেন, না, পাগল ঠিক নয়, কিন্তু ঐ একরকম, তাই কেউ কেউ ওকে পাগল বলে।
কি রকম?