এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

গল্প  :  পথ-নির্দেশ         
পরিচ্ছেদ: / 7
পৃষ্ঠা: / 27
দুই

আমহার্স্ট স্ট্রীটের উপর গুণেন্দ্রের প্রকাণ্ড বাড়ি প্রায় খালি পড়িয়া ছিল। তেতলার একটা ঘরে সে শয়ন করিত, আর একটায় লেখাপড়া করিত। বাকি ঘরগুলা এবং সমস্ত দ্বিতলটা শূন্য পড়িয়া ছিল। নীচের তলায় এক পাচক, দুই ভৃত্য ও এক দারোয়ান এক-একটা ঘর দখল করিয়া থাকিত, তদ্ভিন্ন সমস্ত ঘরই তালাবন্ধ।

গুণেন্দ্রের পিতা লোহার ব্যবসা করিয়া মৃত্যুকালে এত টাকা রাখিয়া গিয়াছিলেন যে, তাঁহার এক সন্তান না থাকিয়া দশ সন্তান থাকিলেও কাহারো উপার্জন করিবার প্রয়োজন হইত না; সেই টাকা এবং পিতার লোহার কারবার বিক্রয় করিয়া ফেলিয়া সমস্ত টাকা গুণেন্দ্র ব্যাঙ্কে জমা দিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া আদালতে ওকালতি করিতে বাহির হইয়াছিল।

বেলা দশটা বাজে, তখনো সে কি-একখানা বই পড়িতেছিল, ভৃত্য আসিয়া বলিল, বাবু আপনার চানের সময় হয়েছে।

যাচ্ছি, বলিয়া গুণেন্দ্র পড়িতেই লাগিল।

ভৃত্যটা খানিক পরেই ফিরিয়া আসিয়া বলিল, দুটি মেয়েমানুষ আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

গুণেন্দ্র বিস্মিত হইয়া বই হইতে মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আমার সঙ্গে?

হাঁ বাবু, আপনার সঙ্গে। আপনার—

তাহার কথা শেষ না হইতেই সুলোচনা ঘরে প্রবেশ করিলেন। গুণেন্দ্র বই বন্ধ করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।

সুলোচনা চাকরটার দিকে চাহিয়া বলিলেন, তুই নিজের কাজে যা।

ভৃত্য চলিয়া গেলে বলিলেন, গুণী, তোমার বাবা কোথায়, বাবা?

গুণেন্দ্র অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল, জবাব দিতে পারিল না।

সুলোচনা ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, আমার মুখের দিকে চেয়ে চিনতে পারবে না বাবা! প্রায় বারো বছর আগে তোমাদেরই ওই পাশের বাড়িতে আমরা ছিলাম। সেই বছরে তোমার পৈতে হয়, আমরাও বাড়ি চলে যাই। তোমার বাবা কি দোকানে গেছেন?

গুণেন্দ্র বলিল, না, বছর-তিনেক হ'ল তিনি মারা গেছেন!

মারা গেছেন! তোমার পিসিমা?

তিনিও নেই। তিনি বাবার পূর্বেই গেছেন।

সুলোচনা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, দেখছি শুধু আমিই আছি। তোমার মা যখন মারা যান, তখন তুমি সাত বছরেরটি। তার পর পৈতে না হওয়া পর্যন্ত আমার কাছেই তুমি মানুষ হয়েছিলে। হাঁ, গুণী, তোর সইমাকে মনে পড়ে না রে?