রাজলক্ষ্মীর উল্লেখ কেহ ইঙ্গিতেও করিলেন না। সেরূপ ব্যাপার যে একটা ঘটিয়াছিল তাহা কাহার মনেই নাই।
পরদিন দেশের স্টেশনে গাড়ি থামিলে আমাকে নামিতেই হইল। তখন বেলা বোধ করি দশটার কাছাকাছি। সময়ে স্নানাহার না করিলে পিত্ত পড়িবার আশঙ্কায় দু'জনেই ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন।
বাড়িতে আনিয়া আদর-যত্নের আর অবধি রহিল না। পুঁটুর বর যে আমিই পাঁচ-সাতদিনে এ-সম্বন্ধে গ্রামের মধ্যে আর কাহারো সন্দেহ রহিল না। এমন কি পুঁটুরও না।
ঠাকুর্দার ইচ্ছা আগামী বৈশাখেই শুভকর্ম সমাধা হইয়া যায়। পুঁটুর যে যেখানে আছে আনিয়া ফেলিবারও একটা কথা উঠিল। রাঙাদিদি পুলকিতচিত্তে কহিলেন, মজা দেখেচ, কে যে কার হাঁড়িতে চাল দিয়ে রেখেচ, আগে থাকতে কারও বলবার জো নাই।
আমি প্রথমটা উদাসীন, পরে চিন্তিত, তারপরে ভীত হইয়া উঠিলাম। সায় দিয়াছি কি দিই নাই―ক্রমশঃ নিজেরই সন্দেহ জন্মিতে লাগিল। ব্যাপার এমনি দাঁড়াইল যে, না বলিতে সাহস হয় না, পাছে বিশ্রী কিছু-একটা ঘটে। পুঁটুর মা এখানেই ছিলেন, একটা রবিবারে হঠাৎ বাপও দেখা দিয়া গেলেন। আমাকে কেহ যাইতেও দেয় না, আমোদ-আহ্লাদ ঠাট্টা-তামাশাও চলে―পুঁটু যে ঘাড়ে চাপিবেই, শুধু দিন-ক্ষণের অপেক্ষা—উত্তরোত্তর এমনি লক্ষণই চারিদিক দিয়া সুস্পষ্ট হইয়া উঠিল। জালে জড়াইতেছি—মনে শান্তিও পাই না—জাল কাটিয়া বাহির হইতেও পারি না। এমনি সময়ে হঠাৎ একটা সুযোগ ঘটিল। ঠাকুর্দা জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার কোন কোষ্ঠী আছে কি না। সেটা ত দরকার।
জোর করিয়া সমস্ত সঙ্কোচ কাটাইয়া বলিয়া ফেলিলাম, আপনারা কি পুঁটুর সঙ্গে আমার বিবাহ দেওয়া সত্যিই স্থির করেচেন?
ঠাকুর্দা কিছুক্ষণ হাঁ করিয়া রহিলেন, পরে বলিলেন, সত্যিই? শোন কথা একবার!
কিন্তু আমি ত এখনো স্থির করিনি।
করোনি? তা হলে করো। মেয়ের বয়েস বারো-তেরোই বলি, আর যাই করি, আসলে ওর বয়েস হ'ল সতেরো-আঠারো। এর পরে ও মেয়ে বিয়ে দেবো আমরা কেমন করে?
কিন্তু সে দোষ ত আমার নয়!
দোষ তবে কার? আমার বোধ হয়?