আজ মহাত্মার মত, পথ ও যুক্তির আলোচনা করিব না। চরকায় দেশের অধোগতি প্রতিহত করিতে পারে কি না, বিদ্রোহ অসহযোগে দেশের রাজনৈতিক মুক্তি আনিতে পারে কি না, আইন-অমান্য আন্দোলনের শেষ পরিণাম কি, এ-সকল প্রশ্ন আজ থাক, কিন্তু মহাত্মার এ দাবী সত্য বলিয়াই স্বীকার করি যে, তাঁহার প্রবর্তিত পথে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই।
একদিন কংগ্রেস আবেদন-নিবেদন অভিযোগ-অনুযোগের সুদীর্ঘ তালিকা প্রস্তুত করিয়াই নিজের কর্তব্য শেষ করিত। বঙ্গ-বিভেদের দিনেও জাতীয় মহাসমিতি বঙ্গকে তাহার অঙ্গ বলিয়া ভাবিতে জানিত না, বাঙলার প্রশ্ন ছিল শুধু বাঙলারই, বোম্বাই-অহমদাবাদ বাঙালীকে এক টাকার কাপড় চার টাকায় বিক্রি করিত, কংগ্রেস নিরুপায় বিস্মিত-চক্ষে শুধু চাহিয়া থাকিত,—কিন্তু এই বিচ্ছিন্ন, অক্ষম জাতীয় মহাসমিতিকে নিজের অদম্য অকপট বিশ্বাসের জোরে সমগ্রতা আনিয়া দিলেন মহাত্মা, দিলেন শক্তি, সঞ্চারিত করিলেন প্রাণ, তাঁহার এই দানই সকৃতজ্ঞ-চিত্তে স্মরণ করিব। উত্তরকালে হয়ত তাঁহার মত ও পথ উভয়ই পরিবর্তিত হইবে, তাঁহার প্রবর্তিত আদর্শের হয়ত চিহ্নও থকিবে না, তথাপি তিনি যাহা দিয়া গেলেন, সমস্ত পরিবর্তনের মাঝেও তাহা অমর হইয়া রহিবে। শৃঙ্খলমুক্ত ভারত ঋণ তাঁহার কোনও দিন বিস্মৃত হইবে না। আজ কংগ্রেস-প্রতিষ্ঠানের তিনি বাহিরে আসিয়াছেন মাত্র, কিন্তু ইহাকে ত্যাগ করেন নাই, করিবার উপায় নাই। যে শিশুকে তিনি মানুষ করিয়াছেন, সে আজ বড় হইয়াছে। তাই তাহাকে নিজের কঠিন শাসনপাশ হইতে মহাত্মা স্বেচ্ছায় মুক্তি দিলেন। ইহাতে শোক করিবার কোন কারণ ঘটে নাই,—এই মুক্তিতে উভয়েরই মঙ্গল হইবে, এই আমার আশা। (‘কিশলয়’, ২য় বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, আশ্বিন, ১৩৪৪)