এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  ভাগ্য-বিড়ম্বিত লেখক-সম্প্রদায়         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 2
ভাগ্য-বিড়ম্বিত লেখক-সম্প্রদায়

সেদিন গুণে দেখলাম—সত্যিকার সাধনা যাঁরা করেন, সাহিত্য যাঁদের শুধু বিলাস নয়, সাহিত্য যাঁদের জীবনের একমাত্র ব্রত, বাঙলাদেশে তাঁরা ক’জনই বা, সংখ্যা আঙুলে গোণা যায়।

এই-সব সাহিত্যসেবী অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনাহারে অনিদ্রায় দেশের জন্য দশের জন্য সাহিত্য সৃষ্টি করেন, সে সাহিত্য শুনেছি নাকি জন-সমাজের কল্যাণ করে, কিন্তু তার কি মূল্য আমরা দিয়ে থাকি?

এই যে সব সাহিত্যিক দেশের জন্য প্রাণপণ করেছেন, তাঁদের পুরস্কার হয়েছে শুধু লাঞ্ছনা আর দারিদ্র। প্রভূত ধন-সম্পত্তি অর্জন করে, বিত্তশালী ধনবান হতে তাঁরা চান না, তাঁরা চান শুধু একটুখানি স্বচ্ছন্দ জীবন, সর্বনাশা দারিদ্র্যের নিদারুণ অভিশাপ থেকে মুক্তি, তাঁরা চান শুধু নিশ্চিত নির্ভাবনায় লিখবার মত একটুখানি অনুকূল আবহাওয়া, অথচ তাঁরা তাও পান না। আজীবন শুধু ভাগ্য-বিড়ম্বিত হয়েই তাঁদের কাটাতে হয়, যাদের কল্যাণ কামনায় তাঁরা জীবন উৎসর্গ করলেন তারা একবার সেদিকে ফিরেও তাকায় না।

দেশের লোক তাঁদের দেয় না কিছু, অথচ, তাঁদের কাছ থেকে চায় অনেক। কোথাও কেউ যদি এতটুকু খারাপ লেখা লিখেছে, অমনি তীব্র সমালোচনার বিষে আর নিন্দার তীক্ষ্ণ শরে তাঁকে জর্জরিত হতে হয়।

এই অতিনিন্দিত গল্প-লেখকদের দৈন্যের সীমা নেই। এঁদের লেখা পড়ে জনসাধারণ আনন্দ লাভ করে সত্য, কিন্তু তাঁদের ঘরের খবর নিতে গেলে দেখতে পাবেন—এই-সব লেখক-সম্প্রদায় কত নিঃস্ব, কত অসহায়। অনেকেরই উপন্যাসের হয়ত দ্বিতীয় সংস্করণ হয় না।

কিন্তু কেন?

এর একমাত্র কারণ, আমাদের দেশের লোক বই পড়েন বটে, কিন্তু পয়সা খরচ করে কিনে পড়েন না। এমন কথা হয়ত উঠতে পারে যে, আমাদের দেশের জনসাধারণ দরিদ্র, বই কেনবার সামর্থ্য তাঁদের নেই। কিন্তু সামর্থ্য যাঁদের আছে, এমন অনেক বড়লোকের বাড়িতে আমি নিজে গেছি, গিয়ে দেখেচি, তাঁদের আছে সবই, গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, বিলাস-ব্যসনের সহস্র উপকরণ আছে, নেই কেবল বই। পয়সা খরচ করে বই কেনা তাঁদের অনেকের কাছেই অপব্যয় ছাড়া আর কিছু নয়।