সাহিত্য সম্মিলনের রূপ
সেদিন হুগলি জেলায় কোন্নগর গ্রামে এমনি এক সাহিত্যিক সম্মেলনে স্নেহাস্পদ লালমিঞা ভাই সাহেব আমাকে যখন আপনাদের ফরিদপুর শহরে আসার জন্যে আমন্ত্রণ করলেন, তখন সেই নিমন্ত্রণ আমি সানন্দে গ্রহণ করে এই অনুরোধ জানিয়েছিলাম, আমি যাবো সত্য কিন্তু এবার যেন এ আসরে বহু-আচরিত বহু-প্রচলিত গতানুগতিক প্রথার পরিবর্তন হয়। বলেছিলাম, তোমাদের ফরিদপুরের মিলনক্ষেত্রে এবার যেন সাহিত্যসেবী ও সাহিত্য-রস-পিপাসুগণের সম্যক্ মিলনের কার্যটা যথার্থভাবে সুসম্পন্ন হতে পায়; কাজের তাড়ায়, প্রবন্ধের ভিড়ে, সু ও কু-সাহিত্যের সংখ্যা নিরূপণের বাগ্-বিতণ্ডায় এর আবহাওয়া যেন ঘুলিয়ে উঠতে না পারে।
বছরে বছরে বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হয় কখনো বা বাঙলার বাহিরে কখনো বা ভিতরে—কখনো পূর্ব কখনো পশ্চিম বাঙলায়, কিন্তু সর্বত্রই চলে ঐ এক নিয়ম এক রীতি। সেখানে হয় সবই, হয় না কেবল পরিচয়। হয় না শুধু ভাবের আদান-প্রদান, বাকী থেকে যায় পরস্পরের মন জানাজানি। তার অবকাশ কৈ? বড় বড় সুনিশ্চিত সারবান প্রবন্ধের ভারে ভারাক্রান্ত সম্মিলনী মেলামেশার সময় করবে কি, নিশ্বাস নেবার ফুরসত করে উঠতে পারে না। সেখানে না থাকে পান-তামাক, না থাকে চা। নড়চড়ার জো নেই পাছে শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, হাস্য-পরিহাসের সাহস নেই পাছে বে-আদপি প্রকাশ পায়, আলাপ-পরিচয়ের সুযোগ মেলে না পাছে গুরু-গম্ভীর প্রবন্ধের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। যেন আদালতের আসামীর মতো সেখানে সবাই গম্ভীর সবাই বিপন্ন। আড়চোখে সবাই চেয়ে দেখে প্রবন্ধের খাতায় আরও ক’পাতা লেখা পড়তে তখনও বাকি। তার পরে আসে সভাভঙ্গের পালা—চলে ইস্টিশানে ছুটোছুটি। শুধু পালাবার পথ নেই যাদের তারাই কেবল ক্লান্ত দেহ-মনে ফিরে চলে বাসায়।
এই হচ্ছে মোটামুটি সাহিত্য-সম্মিলনীর বিবরণ। তাই প্রার্থনা জানিয়েছিলাম. এই ফর্দে আরও একটি বিড়ম্বনার কাহিনী যেন ফরিদপুরের অদৃষ্টেও সংযুক্ত হয়ে না যায়।
বিগত দিনের সাহিত্যিক অনুষ্ঠানগুলিকে স্মরণ করে এ প্রশ্ন আজ আমি করবো না সেই সকল লেখাগুলির কোন্ সদ্গতি অদ্যাবধি হয়েছে,—কারণ, এ জিজ্ঞাসা বাহুল্য।