এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  জাগরণ         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 64
ইন্দু শিক্ষিতা মেয়ে, কিন্তু মুখে তাহার হঠাৎ কথা যোগাইল না। শিক্ষা, সংস্কার ও অভ্যাসবশতঃ জাতির কথা তাহাদের মনেও হয় না, কিন্তু আজ এই শুদ্ধাচারিণী বিধবা জননীর সম্মুখে কেমন যেন তাহার সঙ্কোচ বোধ হইল। কহিল—মা, আপনারা ব্রাহ্মণ, কিন্তু আমি কায়স্থের মেয়ে। আপনি আসন পেতে দিলেন?
গৃহিণী স্নিগ্ধহাস্যে কহিলেন—তুমি যে সন্ধ্যার সময়ে আমার ঘরে লক্ষ্মী এলে। দেবতার কি জাত থাকে, মা? তুমি সকল জাতের বড়।
অমরের ছোটবোন বোধ হয় ইন্দুর সমবয়সী। সে কাছে আসিয়া বসিতেই ইন্দু তাহার ছেলেকে কোলে টানিয়া লইল।
মা জিজ্ঞাসা করিলেন—তোমার নামটি কি মা?
ইন্দু কহিল—মা, আমার নাম ইন্দু।
মা কহিলেন—তাই ত বলি মা, নইলে কি কখনও এমন মুখের শ্রী হয়!
ইন্দু অত্যন্ত লজ্জা পাইয়া মুচকিয়া হাসিয়া কহিল—কিন্তু আর একদিন এলে যে তখন কি বলবেন, আমি তাই শুধু ভাবি।
মাও হাসিয়া কহিলেন—ভাবতে হবে না মা, আমিই ভেবে রেখেছি, সেদিন তোমাকে কি বলবো। কিন্তু আসতে হবে।
ইন্দু স্বীকার করিল। অমরের দিদি ঠাকুরঘর হইতে ছুটি পাইয়া কাছে আসিয়া দাঁড়াইলেন; কহিলেন—ঠাকুরের আরতি হতে বেশী দেরি নেই ইন্দু, তোমাকে কিছু-একটু মুখে দিয়ে যেতে হবে।
ইন্দু তাঁহার পরিচয় অনুমান করিয়া লইয়া বলিল, খাওয়া আমার আগেই হয়ে গেছে দিদি, আর একদিন এসে ঠাকুরের প্রসাদ পেয়ে যাবো, আজ আর আমার পেটে জায়গা নেই।—এই বলিয়া সে পুনঃ পুনঃ প্রতিজ্ঞা করিল যে, এ স্থান ত্যাগ করিবার পূর্বে আর একদিন আসিয়া সে ঠাকুরের প্রসাদ ও মায়ের পায়ের ধূলা গ্রহণ করিয়া যাইবে।
ইন্দু বাটী হইতে যখন বাহির হইল, তখন সন্ধ্যার প্রায়ান্ধকার গাঢ় হইয়া আসিতেছিল। অমরনাথের হাতে একটা হ্যারিকেন লণ্ঠন। ইন্দু কহিল—আলোটা আর কাউকে দিন আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
অমরনাথ কহিলেন—পৌঁছে দেবার লোক আমি ছাড়া আর কেউ নেই।
তার মানে?
তার মানে আপনি অনাহূত আমার ঘরে এসেছিলেন। এখন পৌঁছে দিতে যদি আর কেউ যায় ত আমার অধর্ম হবে।
কিন্তু ফিরতে যে আপনার রাত্রি হয়ে যাবে, অমরনাথবাবু?
তার আর উপায় কি? পাপ অর্জন করার চেয়ে সে বরঞ্চ ঢের ভাল।
ইন্দু কহিল—তবে চলুন। কিন্তু আজ আমার একটা ভুল ভেঙ্গে গেল। আমরা সবাই আপনাকে বড় দরিদ্র ভাবতাম।
অমরনাথ মৌন হইয়া রহিলেন।
ইন্দু কহিল—আপনাদের বাড়ি ছেড়ে আমার আসতে ইচ্ছে করছিল না। আমার ভারী সাধ হয় আলোদের বাড়ি ছেড়ে আমি দিন-কতক মায়ের কাছে এসে থাকি।

অমরনাথ ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে কহিলেন—অত বড় সৌভাগ্যের কল্পনা করতেও আমাদের সাহস হয় না। ('মাসিক বসুমতী', বৈশাখ, ১৩৩২)

[—অসমাপ্ত]