এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  জাগরণ         
পরিচ্ছেদ: / 9
পৃষ্ঠা: / 64
জাগরণ

এক

ব্যারিস্টার মিস্টার আর. এম. রে ব্রাহ্ম ছিলেন না, গোঁড়া হিন্দু ত ছিলেনই না, হয়ত বা আঠারো আনা 'বিলাত ফেরতের জাতি'ও নাও হইবেন; তবে এ কথা সত্য যে, তাঁহার পিতা-মাতা যখন আরাধ্য দেব-দেবী স্মরণ করিয়া সপ্তপুরুষের অক্ষয় স্বর্গকামনায় একমাত্র পুত্রের নাম শ্রীরাধামাধব রায় রাখিয়াছিলেন, তখন অতি বড় দুঃস্বপ্নেও তাঁহারা কল্পনা করেন নাই যে, এই ছেলে একদিন আর. এম. রে হইয়া উঠিবে, কিংবা তাহার খাদ্য অপেক্ষা অখাদ্যে এবং পরিধেয়ের পরিবর্তে অপরিধেয় বস্ত্রেই আসক্তি দুর্মদ হইয়া দাঁড়াইবে। যাই হউক, সেই পিতা-মাতারা আজ যখন জীবিত নাই এবং পরলোকে বসিয়া পুত্রের জন্য তাঁহারা মাথা খুঁড়িতেছেন কিংবা চুল ছিঁড়িতেছেন অনুমান করা কঠিন, তখন এই দিকটা ছাড়িয়া দিয়া তাঁহার যে দিকটায় মতদ্বৈধের আশঙ্কা নাই, সেই দিকটাই বলি।

ইঁহার রাধামাধব অবস্থাতেই বাপ-মায়ের মৃত্যু হয়। কলেরা রোগে সাত দিনের ব্যবধানে যখন তাঁহারা মারা যান, ছেলেকে এন্ট্রান্স পাসটুকু পর্যন্ত করাইয়া যাইতে পারেন নাই। তবে এই একটা বড় কাজ করিয়া গিয়াছিলেন যে, ছেলের জন্য জমিদারি এবং বহু প্রজার রক্তজমাট-করা অসংখ্য টাকা এবং ইহার চেয়েও বড় এক অতিশয় বিশ্বাসপরায়ণ ও সুচতুর কর্মচারীর প্রতি সমস্ত ভারার্পণ করিয়া যাইবার অবকাশ এবং সৌভাগ্য তাঁহাদের ঘটিয়াছিল। কিন্তু এ-সকল অনেক দিনের কথা। আজ ‘সাহেবে’র বয়স পঞ্চাশোর্ধে গিয়াছে, দেশের সে রাজশেখর দেওয়ানও আর নাই, সে-সব দেবসেবা, অতিথিসৎকারের পালাও বহুকাল ঘুচিয়াছে। এখন ইংরাজীনবিস ম্যানেজার এবং সেই সাবেক কালের বাড়ি-ঘরের স্থানে যে ফ্যাশনের বিল্ডিং উঠিয়াছে, মালিক মিস্টার আর. এম. রে’র মত ইহাদেরও পৈতৃকের সহিত কোন জাতীয়ত্ব নাই। অথচ, এই-সকল নবপর্যায়ের সহিতও যে যথেষ্ট সম্পর্ক রাখিয়াছেন, তাহাও নয়। কেবল দূর হইতে সত্ত্ব নিংড়াইয়া যে রস বাহির হয়, তাহাই পান করিয়া এতকাল আত্ম এবং সাহেবত্ব রক্ষা করিয়া চলিতেছিলেন। এইখানে তাঁহার কর্মজীবনের আরও দু-একটা পরিচয় সংক্ষেপে দেওয়া আবশ্যক।