আমার বুকের মধ্যে মনে হল অনেকখানি বাতাস তেমনি করে গুমরে উঠছে। মনে হল কাঁদি। কান্না এল না। অবাক হয়ে রইলাম। একরাতের মধ্যে আমার বুকের সব রক্ত—চোখের সব জল এমন নিঃশেষ করে কে শুষে নিলে।
তার পর আর কুমারের সঙ্গে দেখা হল না। লজ্জায় কারুকে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না, তিনি কোথায়।
মস্তবড় বাড়ির মধ্যে খাঁচার পাখির মত আট্কা পড়ে রইলুম। যে আমাকে দেখে সেই কাঁদে—আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকি।
শেষকালে একদিন রাজপুত্তুর দেখা দিলেন। সেদিন কি ঘুমেই না পেয়েছিল আমাকে! কত তিনি বলেছিলেন; তার মানে তখন বুঝিনি। এখনই কি ছাই বুঝতে পেরেছি!
তিনি বললেন, আবার দেখা হবে; কবে তা বলেন নি। বলেছেন, তিনি আমাকে ছেড়ে কোথাও থাকতে পারবেন না। তিনি মানা করেছেন—আমাকে সিঁথির সিঁদুর মুছতে—আমার হাতের চুড়ি খুলে ফেলতে। তাই এই সিঁদুর—তাই আজও এই পোড়া হাত-দুটোতে সোনার চুড়ি ঝকঝক করে।
এখন তোমরা কি কেউ দয়া করে আমাকে বলতে পার, কবে তিনি আসছেন?
ও কি! তোমরাও যে অবাক হয়ে চেয়ে রইলে! চোখের অমন উদাস চাউনি যে আমি সইতে পারিনে।
ওগো, তোমরা কি সব ছবি? কথা কও না? হায় হায়—এ কোন্ দেশে তুমি আমায় রেখে গেছ কুমার! ও মা! চোখের কোণে তোমাদের ও কি গা? জল নয় ত! সে কি, তোমরাও কথা কইবে না? তবে কে আমায় বলে দেবে—কবে তুমি আসবে কুমার!
(‘ভারতবর্ষ’, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৪)