এটা বুঝিবার ভুল। বঙ্কিমবাবু যেমন কৃষ্ণকান্তের উইলের গোড়াতেই 'ইহলোকান্ত' না বলিয়া একাধিক বার 'পরলোকান্তে' বলিয়াছেন—তেমনি। কিন্তু, এটা যদি রবিবাবুর অনুকরণ করা হইয়া থাকে, তাহা হইলে অন্যায় করা হইয়াছে। তিনি 'সন্তরণ মূঢ় রমেশ সঙ্গীতের হাঁটুজলে' ইত্যাদি বলিয়াছেন, 'সন্তরণহীন' বলেন নাই। যাহা হউক, এটা ধর্তব্যের মধ্যেই নয়। কিন্তু ধর্তব্যের মধ্যে সেইটা নিশ্চয়ই, যেটা না জানা সত্ত্বেও লেখা হইয়াছে। যেখানে সতী আফিং এবং বেলেডোনা দু-ই খাইয়াছে। একটা বিষ, আর একটা প্রতিষেধক। বেলেডোনা বিষে ডাক্তারেরা 'মরফিন্' ইনজেকট করেন। দুইটা বিষ একসঙ্গে সেবন করিলে দুর্ভাগা যে অনেক সময়ে শুধু মরে না, তা নয়, মরিলেও অত শীঘ্র, অত আরামে মমে না। অনেক বিলম্বে অনেক কষ্টে মরে। সেটা নিশ্চয়ই লেখিকার অভিপ্রায় ছিল না। তাছাড়া, দুর্ঘটনার আশঙ্কা যথেষ্ট ছিল। হয়ত, মরিতই না, হয়ত পোড়াইবার সময় চোখ চাহিয়া ফেলিত! যাহা হউক, যখন নির্বিঘ্নে কার্যোদ্ধার হইয়াছে, তখন আর আলোচনার প্রয়োজন নাই। কিন্তু বেলেডোনা যোগাড় করিবার জন্য মালিশের ঔষধ, ডাক্তার, ডাক্তারখানা, বাত ইত্যাদি অনেক অবান্তর কথার অবতারণা করিতে হইয়াছে। সুতরাং, একটুখানি জানিয়া লিখিলে আর এই বাজে মেহন্নতগুলা করিতে হইত না।
আর না। এইবার সমাপ্ত করি। অপ্রিয় কথা অনেক লিখিলাম। আশা করি, ইহাতে সুফল ফলিবে। আর যদি প্রচলিত নিয়মানুসারে লিখক-লেখিকারা এই বলিয়া সান্ত্বনা লাভ করিবার চেষ্টা করেন যে, সমালোচকেরা নিজেরা লিখিতে পারে না বলিয়াই হিংসা করিয়া গ্লানি করে, তাহা হইলে আমি নিরুপায়। কিন্তু সমালোচক মাত্রেই যে লিখিতে পারে না, এবং পারে না বলিয়াই দোষ দেখাইয়া বেড়ায়, এ কথাটার উপরেও তত আস্থা রাখা ঠিক নয়। শ্রীঅনিলা দেবী ( 'যমুনা', ফাল্গুন ১৩১৯)