এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা  :  ক্ষুদ্রের গৌরব         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 5
মলিন বর্ষার দিনে আকাশের গায় নিবিড় জলদজাল বায়ুভরে চালিত হইতে দেখিলে মনে পড়ে, সেই যক্ষের কথা। মনে হয়, আজিও বুঝি তেমনি করিয়া উন্মত্ত যক্ষ ঐ মেঘপানে চাহিয়া প্রণয়িণীর সহিত কথা কহিতে চাহিতেছে। স্মরণ হয়, যেন যক্ষবধূর বিরহক্লিষ্ট ম্লান মুখশোভা কোথায় কোন্‌ মায়ার দেশে দেখিয়া আসিয়াছি। কিন্তু যে মনস্বী এই জীবন্ত মূর্তিময় মানসপটে গভীরভাবে অঙ্কিত করিয়া দিয়াছেন, জলদজাল সেই মহান্‌ প্রতিভার ছায়ামাত্র। আপনার শরীর সেই উজ্জ্বল জ্যোতির প্রতিবিম্ব বহিয়া লইয়া বেড়ায়, মেঘের ইহাই গর্ব! তাহার আনন্দ যে, সে মহতের আশ্রিত।

তাই পূর্বে বলিতেছিলাম, সমুদ্রের জল যাহা পারে, কূপের জল তাহা পারে না। যে-দুঃখে সদানন্দ রাধার জন্য কাঁদিতে পারিয়াছিল, সে-দুঃখে হয়ত শরৎ-শশীর জন্য কাঁদিতে পারিত না। ইহাতে সদানন্দের দোষ দিই না—শরৎ-শশীর অদৃষ্টের দোষ দিই। শরৎ-শশীর দুঃখে কাঁদাইতে হইলে আর কোন মনস্বীর প্রয়োজন—ক্ষুদ্র ছায়ার কর্ম নহে। ছায়ার নিজের মহত্ত্ব কিছুই নাই, সে যখন মহতের আশ্রিত হইতে পারিবে তখনই তাহার মহত্ত্ব। হইতে পারে সে রাজপথের ধূলা, কিন্তু বৃন্দাবনের পবিত্র রজঃ হইবার আকাঙ্ক্ষা যে তাহার একেবারে দুরাশা তাহাও মনে হয় না।

কিন্তু কথায় কথায় দরিদ্র সদানন্দের কথা ভুলিয়াছি। সে-রাত্রে সে আর উঠে নাই। প্রভাত হইলে রোহিণীকুমার জানালায় আসিয়া দেখিল, সদানন্দ তেমনি মাথা নিচু করিয়া বসিয়া আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিয়া ভাবিল, সদানন্দ কি বসিয়া ঘুমাইতে পারে? তাহার পর ডাকিল, “সদা—ও সদানন্দ!”

সদানন্দ জাগ্রত ছিল, উত্তর দিল, “কি?”

“জেগে আছ?”

“আছি”।

“সমস্ত রাত?”

“বোধ হয়।”

রোহিণীকুমার বিস্মিত হইয়া মনে মনে ভাবিল, এ কিরূপ নেশা? তাহার পর একটু থামিয়া—একটু চিন্তা করিয়া বলিল, “সদানন্দ, মনে করিতেছি এ কু-অভ্যাসটা ছাড়িয়া দিব। তুমি শোও গে—আমি যাই। আর একদিন দেখা হবে।” শ্রী—চট্টোপাধ্যায়। শ্রাবণ ১৩০৮ ('যমুনা', মাঘ ১৩২০)*