এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

অজ্ঞাত রচনা  :  ৫৭তম জন্মদিনে প্রতিভাষণ         
পরিচ্ছেদ: / 1
পৃষ্ঠা: / 3
৫৭তম জন্মদিনে প্রতিভাষণ

৩১এ ভাদ্র—আমার জন্মদিনের আশীর্বাদ-গ্রহণের আহ্বান আমার স্বদেশের আপনজনদের কাছ থেকে প্রতি বৎসরই আসে, আমি শ্রদ্ধানত শিরে এসে দাঁড়াই; অঞ্জলি ভরে আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি যাই,—সে আমার সারা-বছরের পাথেয়। আবার আসে ৩১এ

ভাদ্র ফিরে, আবার আসে আমার ডাক, আবার এসে আপনাদের কাছে দাঁড়াই। এমনি করে এ-জীবনের অপরাহ্ন সায়াহ্ন এগিয়ে এলো।

এই ৩১ এ ভাদ্র বছরে বছরে ফিরে আসবে, কিন্তু একদিন আমি আর আসবো না। সেদিন এ কথা কারো বা ব্যথার সঙ্গে মনে পড়বে, কারো বা নানা কাজের ভিড়ে স্মরণ হবে না। এই-ই হয়, এমনি করেই জগৎ চলে।

কেবল প্রার্থনা করি, সেদিনও যেন এমনিধারা স্নেহের আয়োজন থেকে যায়; আজকের দিনে যাঁরা তরুণ, বাণীর মন্দিরে যাঁরা নবীন সেবক, তাঁরা যেন এমনি সভাতলে দাঁড়িয়ে আপনাদের দক্ষিণহস্তের এমনি অকুণ্ঠিত দানে হৃদয় পূর্ণ করে নিয়ে গৃহে যেতে পারেন।

আমার অকিঞ্চিৎকর সাহিত্য-সেবার পুরস্কার দেশের কাছে আমি অনেক দিক দিয়ে অনেক পেলাম—আমার প্রাপ্যেরও অনেক বেশী ।

আজকের দিনে আমার সবচেয়ে মনে পড়ে এর কতটুকুতে আমার আপন দাবী, আর কত বড় এর ঋণ। ঋণ কি শুধু আমার পূর্ববর্তী পূজনীয় সাহিত্যাচার্যগণের কাছেই? সংসারে যারা শুধু দিলে, পেলে না কিছু, যারা বঞ্চিত, যারা দুর্বল, উৎপীড়িত, মানুষ হয়েও মানুষে যাদের চোখের জলের কখনও হিসাব নিলে না, নিরুপায় দুঃখময় জীবনে যারা কোনদিন ভেবেই পেলে না সমস্ত থেকেও কেন তাদের কিছুতেই অধিকার নেই,—এদের কাছেও কি ঋণ আমার কম? এদের বেদনাই দিলে আমার মুখ খুলে, এরাই পাঠালে আমাকে মানুষের কাছে মানুষের নালিশ জানাতে। তাদের প্রতি কত দেখেচি অবিচার, কত দেখেচি কুবিচার, কত দেখেচি নির্বিচারের দুঃসহ সুবিচার। তাই আমার কারবার শুধু এদেরই নিয়ে। সংসারে সৌন্দর্যে সম্পদে ভরা বসন্ত আসে জানি; আনে সঙ্গে তার কোকিলের গান, আনে প্রস্ফুটিত মল্লিকা-মালতী-জাতি-যূথি, আনে গন্ধ-ব্যাকুল দক্ষিণা পবন; কিন্তু যে আবেষ্টনে দৃষ্টি আমার আবদ্ধ রয়ে গেল, তার ভিতরে ওরা দেখা দিলে না। ওদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সুযোগ আমার ঘটলো না। সে দারিদ্র্য আমার লেখার মধ্যে চাইলেই চোখে পড়ে। কিন্তু অন্তরে যাকে পাইনি, শ্রুতিমধুর শব্দরাশির অর্থহীন মালা গেঁথে তাকেই পেয়েচি বলে প্রকাশ করবার ধৃষ্টতাও আমি করিনি। এমনি আরও অনেক কিছুই—এ জীবনে যাঁদের তত্ত্ব খুঁজে মেলেনি, স্পর্ধিত অবিনয়ে মর্যাদা তাঁদের ক্ষুণ্ণ করার অপরাধও আমার নেই। তাই সাহিত্য-সাধনার বিষয়বস্তু ও বক্তব্য আমার বিস্তৃত ও ব্যাপক নয়, তারা সংকীর্ণ স্বল্প-পরিসরবদ্ধ। তবুও এইটুকুও দাবী করি, অসত্যে অনুরঞ্জিত করে তাদের আজও আমি সত্যভ্রষ্ট করিনি।