এই ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখতে হলে Mozilla Firefox, Microsoft Edge অথবা Apple Safari browser ব্যবহার করুন।

উপন্যাস  :  দেনা-পাওনা         
পরিচ্ছেদ: / 28
পৃষ্ঠা: / 183
ষোড়শী কহিল, যেখানে আমার দু’চোখ যাবে।

কখন যেতে হবে?

এখনই। সাহেব এসে পড়ার আগেই।

জীবানন্দ তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া ধীরে ধীরে কহিল, কিন্তু আমার প্রজারা? তাদের কাছে আমাদের পুরুষানুক্রমে জমা করা ঋণ?

ষোড়শী তাহার দৃষ্টি এড়াইয়া চুপি চুপি বলিল, পুরুষানুক্রমে আমাদের তা শোধ দিতে হবে।

জীবানন্দ খুশী হইয়া বলিল, ঠিক কথা অলকা। কিন্তু দেরি করলে ত চলবে না। এখন থেকে ত আমাদের দু’জনকে এ ভার মাথায় নিতে হবে।

ষোড়শী সহসা দুই হাত জোড় করিয়া কহিল, হুজুর, দাসীকে এইটুকু শুধু ভিক্ষে দেবেন, প্রজাদের ভার নেবার চেষ্টা করে আর ভারী করে তুলবেন না। সমস্ত জীবন ধরেই ত নানাবিধ ভার বয়ে এসেছেন, এখন অসুস্থ দেহ একটু বিশ্রাম করলে কেউ নিন্দে করবে না। কিন্তু কে সাহেব এসে পড়তে পারে, চলুন।

প্রত্যুত্তরে জীবানন্দ শুধু একটুখানি হাসিয়া তাহার হাত ধরিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। কহিল, এমন করে আমার সমস্ত ক্ষমতা তুমি কেড়ে নিয়ো না অলকা—আমাকে দুঃখীর কাজে লাগিয়ে দেখো কখ্‌খনো ঠকবে না।

কথা শুনিয়া অলকার দু’চক্ষু ছলছল করিয়া আসিল, এবং এমন একান্ত আত্মসমর্পণের দ্বারা যে তাহার সর্বস্ব জয় করিয়া লইয়াছে, তাহারই মুখের প্রতি চাহিয়া তাহার পদতলের মাটিটা পর্যন্ত যেন অকস্মাৎ কাঁপিয়া দুলিয়া উঠিল, কিন্তু আপনাকে সে তৎক্ষণাৎ সংবরণ করিয়া লইয়া হাতের উপরে একটু চাপ দিয়া হাসিয়া বলিল, আচ্ছা চল ত এখন। নৌকাতে বসে তখন ধীরে-সুস্থে ভেবে দেখবো কি কি ক্ষমতা তোমাকে দেওয়া যেতে পারবে এবং কি কি একেবারেই দেওয়া চলবে না।

সেই ভালো! বলিয়া জীবানন্দ ষোড়শীর হাত ধরিয়া অগ্রসর হইল।