সন্ধ্যা ঠিক চিনিয়াছিল, জ্ঞানদা মুহূর্তে দুই হাত বাড়াইয়া তাহাকে বুকে টানিয়া লইয়া ফুকারিয়া কাঁদিয়া উঠিল। সন্ধ্যার বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না। সে নিজের দুর্ভাগ্যেই অভিভূত ছিল, ইতিমধ্যে তাহারই পাশের বাড়িতে আর একজন হতভাগিনীর ভাগ্য যে কোন্ অতলে তলাইতেছিল তাহার কিছুই জানিত না, কিন্তু প্রিয় একেবারে বিবর্ণ হইয়া উঠিল।
সন্ধ্যা কহিল, তুমি কোথায় যাবে জ্ঞানোদিদি?
জ্ঞানদার রুদ্ধকণ্ঠ দিয়া শব্দ বাহির হইল না, সে কেবল মাথা নাড়িয়া জানাইল, গন্তব্যস্থান যে কোথায় তাহা সে জানে না।
ইহার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত কেহই কোন কথা কহিল না। কিন্তু গাড়ির সময় নিকটবর্তী হইয়া আসিতেছে, টিকিট কিনিতে হইবে, তাই প্রিয় অনেক চেষ্টায় স্বর বাহির করিয়া কহিলেন, তুমি কোথায় যাবে জ্ঞানদা? তোমার কি টিকিট কেনা হয়েছে?
জ্ঞানদা তেমনি মাথা নাড়িয়া বলিল, না। তাহার পরে অশ্রুবিকৃত-কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কোথায় যাবেন?
প্রিয় কহিলেন, বৃন্দাবনে।
সন্ধ্যাও কি সঙ্গে যাবে?
প্রিয় কহিলেন, হাঁ।
জ্ঞানদা অঞ্চলের গ্রন্থি খুলিয়া কতকগুলা টাকা প্রিয়র পায়ের কাছে রাখিয়া দিয়া বলিল, টিকিটের দাম কত আমি জানিনে, কিন্তু এই পঞ্চাশটি টাকা আমার আছে—আমাকেও একখানি বৃন্দাবনের টিকিট কিনে দিন। কেবল এইটুকু আমাকে সঙ্গে নিন, তার বেশী আর আমি পৃথিবীতে কারও কিছু চাইব না।
প্রিয় ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া শেষে আস্তে আস্তে বলিলেন, আচ্ছা, চল আমাদেরই সঙ্গে।